মাঠকে মাঠ যেনো সবুজের হাতছানি। সারি সারি লিচু গাছ থরে থরে সাজানো। রাস্তার দু’পাশের লিচুগাছ সারিবদ্ধ একে অপরের সঙ্গে গলাগলি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
গাছের পাতার ফাঁকে দোয়েল-শালিক-চঁড়ুইসহ বিচিত্রসব পাখ-পাখালির কলতান। ফাল্গুনের শুরুতে সবুজ পাতার মাঝে সবুজ ডগায় নাক ফুলের মতো লিচুর মুকুল আসতে শুরু করেছে। এতে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে।
আজ শনিবার পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম ঘুরে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। গ্রামগুলো দেখে মনে হয় সৌন্দর্যময়ের স্বপ্নপুরি, শিল্পীর তুলির আচঁড়ে আঁকা ছবি। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রকৃতি প্রেমীদের মনে দোলা দিচ্ছে।
আবহাওয়া অনুকূল, উর্বর মাটির কারণে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষিতে বেশ সমৃদ্ধ। ঈশ্বরদী উপজেলাতে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হয় বলে কৃষি, বীজ উৎপাদন কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র সংরক্ষণাগার এই উপজেলা অবস্থিত। এছাড়া লিচু উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ লাভ করার জন্য এই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামের মানুষ লিচু চাষের দিকে ঝুঁকেছে।
ঈশ্বরদীতে জলবায়ু সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ তাই বেশ প্রভাব ফেলে প্রকৃতিতে। অবহাওয়া কিছুটা রুক্ষ। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অনেক বেশি আবার শীতের সময়টা কোনো কোনো বছর প্রচণ্ড শীত অনুভূত হয়। মাঘ মাসের শেষ থেকে ফাল্গুনের মাঝামাঝি সময়ে লিচুর মুকুল আসতে শুরু হয়। ফাল্গুনের শেষে লিচুর সোনারঙা মুকুলে কুঁড়ি আসতে থাকে। চৈত্রের শুরুতে কুঁড়িতে ধারণ করে। বৈশাখ জুড়ে গাছে গাছে টকটকে লাল লিচুর দেখা মিলবে। বর্তমানে ঈশ্বরদী উপজেলা ৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের লিচু চাষ হচ্ছে।
সরোজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাগানগুলোতে লিচুর মুকুল আসার আগে থেকে লিচু চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। মুকুল আসার পরে অনেকটাই ব্যস্ত পরিচর্যা করতে। বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টি না হলে লিচুর ফলন ভালো হবে। মুকুল এসে যেন ঝরে না পড়ে। যে কারণে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা।
ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের সৌখিন লিচু চাষি পলাশ আহম্মেদ (৪৫) জানান, এ বছরে লিচুর মুকুল আসার আগেই হালকা বৃষ্টি আসার কারণে বেশ ভালো মুকুল এসেছে। মুকুল থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়নি। আমরা বাগান পরিচর্যা করতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছি। বাগানে কীটপতঙ্গ এবং মাকড়সা দূর করতে বালাইনাশক স্পে, পরিচর্যা করতে ব্যস্ত কৃষকেরা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বাংলানিউজকে জানান, আবহাওয়া অনেকটাই অনুকূলে। এ বছর লিচু চাষের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা আছে।
কৃষি কর্মকর্তা, মিতা সরকার আরও জানান, লিচু গাছে ফুল বের হওয়ার গত বছর হঠাৎ অতিরিক্ত গরমের কারণে ফুল ধারণের জন্য হরমোন বের হয়। গাছের শাখার,অগ্রভাগে তাপমাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধির পায়। হরমোন মিশ্রিত হওয়াতে কচিপাতা বের হয়েছিল, মুকুল কম এসেছিল।
লিচু গাছে মুকুল আসার আগে ও পরে কিছু পরিচর্যা রয়েছে এ বছরে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি রোগবালাই-পরিচর্যা সম্পর্কে। এছাড়া ঈশ্বরদী উপজেলায় বিভিন্ন কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করা ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রেখেছি বলে জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।