ইমরান খান আমার শৈশবের শ্যাডো শিক্ষক ছিলেন: আসিফ

রাজনীতি

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে দিনভর নানা নাটকীয়তার পরে শনিবার দিবাগত মধ্যরাতের পরে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।

এদিকে, ফেসবুকে আসিফ লিখেছেন, ইমরান খান আমার সর্বকালের সেরা প্রিয় ক্রিকেটার। উনার বীরোচিত আগ্রাসী অধিনায়কত্ব আমার কৈশোরের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করেছে। মাঠে ছিলেন মেজাজী, প্লেয়ারদের যে কোন ভুলে উনার দেয়া গালিগুলোও ভাল লাগতো। অংশগ্রহণই বড় কথা, জয় পরাজয় নয়- এসব তত্ত্বকথার ধার ধারতেন না তিনি।

দলের শক্তি যে লেভেলেরই হোক তিনি জয়ের জন্যই খেলতেন। প্রচুর ম্যাচ ফিক্সার টিম মেট নিয়ে দলকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছেন ক্যারিশম্যাটিক অধিনায়কত্ব দিয়ে। কুমিল্লার হাসান পেপারস থেকে দশ টাকা করে পোস্টার কিনে বাসায় টানিয়ে রাখতাম। ৮৯ সালে আমাদের ক্লাব ক্রিকেটার্স কুমিল্লা থেকে হাসান, পিয়াস আর আমাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিলো জাহাঙ্গীর শাহ বাদশাহ আর শাকিল কাসেম ভাইয়ের পেস বোলিং কোচিং ক্যাম্পে।

পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি হতে হবে উচ্চতা। আমরা সফলভাবে সেই কোর্স সম্পন্ন করেছি। সকালে ক্যাম্প শেষ করে বিকালে আবাহনীর ইনডোরে নেট প্র্যাকটিসে যেতাম। সেখানেই ইমরান খান সাহেবের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ। ফিটনেস উচ্চতা সৌন্দর্যের সমন্বয়ে একজন অদ্ভূত ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হওয়ার সৌভাগ্য হলো। বাংলাদেশ টিমের সাবেক ওপেনার হারুনুর রশীদ লিটন ভাই নেটে ব্যাট করছিলেন। আমরাও ছিলাম নেট বোলিংয়ে। লিটন ভাই উনার ইনসুইং বলগুলোকে এগ্রেসিভলি স্কয়ার ড্রাইভ বা কাট করছিলেন।

যেটা নেটে বেসিক বহির্ভূত শট ছিল। তিনি উর্দূতে লিটন ভাইকে বোঝালেন- ইমরান খানকে মেরে লাভ নেই, বলটা প্রোপার বেসিকে খেলো। বলেই পরের বলটা ফোর্থ স্টাম্পে আউটসুইং মেরে দিলেন। লিটন ভাই আরো বীরত্ব দেখাতে গিয়ে আবারো কমিটেড স্কয়ার ড্রাইভ খেলতে গিয়ে এবার স্লিপে স্নিক দিলেন। খান সাহেবের কিছু টিপস পাওয়ার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিলো। তখন ছবি তোলা নিয়ে এতো আদিখিল্লাপনা ছিলো না তাই ছবি নেই। ইংল্যান্ডের বিলাসবহুল জীবনের মোহ ত্যাগ করে পাকিস্তানের মত একটা উদ্ভট রাজনৈতিক কালচারের দেশে এসেছিলেন রাজনীতি করতে। দেশের অসহায় গরীব মানুষের ভাগ্য বদলের জন্যই উনার আত্মত্যাগ। সময়ের পরিক্রমায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। গত কয়েকদিনের ঘটনা পরিক্রমায় আমি উনার জীবন নাশের আশঙ্কায় ছিলাম।

পাকিস্তান দেশটা সবক্ষেত্রেই আনপ্রেডিক্টেবল, যে কোন ঘটনা এরা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। রাতের ভোটে খান সাহেব বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন সেটা নিয়ে আফসোস নেই, তিনি আবারো ফিরবেন এটাও জানি। ক্যাপ্টেন অলওয়েজ ক্যাপ্টেন, তিনি তো ক্যাপ্টেনদের ক্যাপ্টেন। কোন পরাজয়ে জীবন হেরে যায়না, প্রতিটা পরাজয় জীবনে নতুন বার্তা নিয়ে আসে। বহুদিন পর মুসলিম বিশ্ব একজন শিরদাঁড়াওয়ালা নেতা পেয়েছিলো। রাজনীতি সবসময়ই পিকাডেলী সার্কাসের মত বিশাল গোলকধাঁধা। পাকিস্তানের রাজনীতি তো আরো ককটেল ! একজন ক্রিকেটার প্রথমবারের মত প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসতে পেরেছেন, এটাই ছিল আসল ভাল লাগা।

দেশপ্রেমিকরা অপমান গায়ে মাখেনা, কারো মাথায় দেশকে ভালবাসার পোকা ঢুকে গেলে সেখান থেকে ফেরার পথও খোঁজেনা। ইমরান খান আমার শৈশবের শ্যাডো শিক্ষক ছিলেন, এবার উনার দৃঢ়চেতা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ফ্যান হলাম। “ইয়া কানা’বুদু ওয়া ইয়া কানাস্তাইন” অর্থ- আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি ( সুরা ফাতিহা, আয়াত ৪)। এই পবিত্র আয়াত আপনার মুখে আবারো শোনার অপেক্ষায় থাকলাম জনাব ইমরান খান। আপনার সুস্বাস্থ্য আর দীর্ঘায়ু কামনা করি। ভালবাসা অবিরাম…

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *