আশ্রয়শিবিরে থমথমে অবস্থা, মুহিবুল্লাহ হত্যার বিচার চায় রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশ সর্বশেষ খবর

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে গতকাল বুধবার রাতে অস্ত্রধারীদের গুলিতে শীর্ষনেতা মুহিবুল্লাহ (৪৮) হত্যার ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানকার পরিস্থিতি থমথমে। মুহিবুল্লাহ ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইট (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। এই সংগঠনের হয়ে তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতেন।

২০১৯ সালের ১৭ জুলাই রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। এর এক মাস পর ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন তিনি।
মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আশ্রয়শিবিরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় পুলিশ। শরণার্থীদের ঘরে থাকতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে যাতায়াত ও হাঁটাচলায় কড়াকড়ি করছে পুলিশ। সকাল ছয়টা থেকে বন্ধ আছে লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের দোকানপাট। লুটপাট বন্ধে পাহারা বসিয়েছে পুলিশ।
দুপুরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে নিহত মুহিবুল্লাহর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন মো. আবদুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গুলিতেই মুহিবুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, সন্ধ্যার দিকে মুহিবুল্লাহর মরদেহ লশ্বাশিয়ার ক্যাম্পে নিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর রাতে আশ্রয়শিবিরের কবরস্থানে দাফন করা হবে। মুহিবুল্লাহকে একনজর দেখার জন্য সেখানে জড়ো হয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। রোহিঙ্গারা তাদের নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার বিচার চায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তদের ফাঁসি চায়।
পুলিশ জানায়, গতকাল বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বাড়ির সামনে সংগঠনের কার্যালয়ে যান মুহিবুল্লাহ। সেখানে কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে আলাপের সময় অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা একাধিক গুলি করে পালিয়ে যায়। তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আশ্রয়শিবিরের ক্যাম্প-১ ইস্টের ব্লক-ডি ৮ বাসাতে থাকতেন এই রোহিঙ্গা নেতা।

লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নুর কামাল (৫৬) বলেন, ‘মাস্টার মুহিবুল্লাহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে রোহিঙ্গাদের অধিকার ও স্বার্থ নিয়ে কথা বলেন। এ কারণে অনেকের রোষানলে পড়েন। এর আগেও তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন থামিয়ে দিতে চায়।’

আরেক রোহিঙ্গা রহিম উল্লাহ (৬০) বলেন, অস্ত্রধারীরা অনেকে ছদ্মবেশে অফিসে ঢুকে মুজিবুল্লাহকে জিন্মি করে ফেলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগে পরপর পাঁচটি গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। অন্ধকারের ঘটনা বলে উপস্থিত রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসীদের পরিচয়, ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের ধরন সম্পর্কে পরিষ্কার হতে পারছেন না। তবে অস্ত্রধারী হামলাকারীরা যে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, এই শিবিরে অন্তত চার থেকে পাঁচটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাইমুল হক ঘটনাস্থলে প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হয়েছেন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ। কিন্তু কেন খুন করল, কোন বাহিনী খুন করল; তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *