অবশেষে বরফ গলছে পাকিস্তান-সৌদি আরব সম্পর্কের

আন্তর্জাতিক

নিউজ ডেষ্ক- অবশেষে বরফ গলছে পাকিস্তান-সৌদি আরব সম্পর্কের। নানা ঘটনার পর আবার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছে এই দুই দেশের। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী মার্চে পাকিস্তান সফরে আসতে পারেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তার এ সফর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত। সফরের তারিখ চূড়ান্ত করতে আলোচনা চলছে দু’দেশের মধ্যে। এ বিষয়ে জানেন এমন সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে অনলাইন এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

ওই খবরে বলা হয়েছে, আগামী ২৩ শে মার্চ পাকিস্তানে জাতীয় দিবস। এই দিবসের প্যারেডে গেস্ট অব অনার হিসেবে ক্রাউন প্রিন্সের উপস্থিতি খুব বেশি প্রত্যাশা করছে পাকিস্তান। এ নিয়ে উভয় পক্ষ একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। যদি ক্রাউন প্রিন্স এ সফরে পাকিস্তান আসেন তাহলে তিন বছরের মধ্যে এটা হবে তার দ্বিতীয় সফর।

এর আগে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ পাকিস্তান সফর করেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। ওই পুলওয়ামা হামলার ফলে পারমাণবিক অস্ত্রধর দুই রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানকে একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। ওই সফরে বিমানবন্দরে পৌঁছলে ক্রাউন প্রিন্সকে নিজে গাড়ি চালিয়ে তার অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এতে মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নেতার আন্তরিকতা কতটুকু তা ফুটে উঠেছে। ২০১৮ সালে পাকিস্তানে নতুন সরকার গঠন করে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) দল। ইমরান খানের সরকারকে উঠে দাঁড়াতে পাকিস্তানকে বড় অংকের আর্থিক বেইলআউট প্যাকেজ অনুমোদন করে সৌদি আরব।

এর কয়েক মাসের মধ্যে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন ইমরান খান। প্রতিপক্ষ এই দুই দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে এই সাক্ষাতের ঘটনায় পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কে অস্বাভাবিক এক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।

ইমরান খান মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর সামিটে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সম্পর্কে আরও টান ধরে। মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ইমরান খানের সাক্ষাত বা ওই সামিটকে সৌদি আরব দেখে থাকে, একটি সমান্তরাল ইসলামিক ব্লক হিসেবে। সৌদি আরব মনে করে রিয়াদের নেতৃত্বে যে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) আছে, তার প্রতিপক্ষ হিসেবে এই ব্লক সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন মাহাথির। সৌদি আরবের এই ক্ষোভের কারণে ওই সামিট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে।

এক পর্যায়ে সম্পর্ক এতটা খারাপ পর্যায়ে যায় যে, এর আগে সৌদি আরবের কাছ থেকে যে ঋণ নিয়েছিল পাকিস্তান, সেই অর্থ সৌদি আরবকে ফেরত দিতে হয়। পাকিস্তান-সৌদি আরব সম্পর্কে এটা এক বিরল অবস্থা। অতীতে পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল রিয়াদ। কিন্তু সেই অর্থ তারা কখনোই ইসলামাবাদের কাছে ফেরত চায়নি। এমনকি অনেক সময় সেই অর্থকে ঋণ হিসেবেও দেখা হয়নি।

এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জো বাইডেন। তার বিজয়ে এই দুই দেশ আবার একত্রিত হয়। কারণ, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মতো না হয়ে, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে থাকেন। তার প্রশাসন ইয়েমেন যুদ্ধে অস্ত্রের সরবরাহ প্রত্যাহার করে। তবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কথা বলেননি জো বাইডেন।

গত বছর অক্টোবরে সৌদি আরব সফরে যান ইমরান খান। তার এই সফরে অবশেষে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের জমাট বরফ গলে যায়। ইমরান খানের ওই সফরে সৌদি আরব পাকিস্তানকে ৪২০ কোটি ডলার বেইলআউট প্যাকেজ দেয়ার ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ৩০০ কোটি ডলার নগদ অর্থ হিসেবে সরবরাহ দেয়ার কথা বলা হয়। ইসলামাবাদে ওআইসি ফরেন মিনিস্টারস অন আফগানিস্তান বিষয়ক ব্যতিক্রমী মিটিং আয়োজনে সহযোগিতা করে পাকিস্তান ও সৌদি আরব।

ওই কনফারেন্স ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ব্যানারে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠিত হয় আফগানিস্তানের মানুষের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলর জন্য। ২২শে মার্চ ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়মিত কনফারেন্স আয়োজন করছে পাকিস্তান। আশা করা হচ্ছে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরকে পাকিস্তান দিবসের প্যারেড প্রত্যক্ষ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *