নিউজ ডেষ্ক- ইসলামী শরিয়ত মানুষের প্রয়োজন বিবেচনা করে অনেক অবৈধ জিনিসের ব্যাপারে কিছু ছাড় দিয়েছে। আমরা জানি সমাজে সচরাচর একটি পাপ হচ্ছে গিবত, আর গিবত করা হারাম। এর ভয়াবহতার বর্ণনা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিসে এসেছে। তবে প্রয়োজনের কারণে অন্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করার সুযোগ রয়েছে; যখন তা শরিয়ত-সমর্থিত হয়।
নিম্নে আমরা সেসব কারণ নিয়ে আলোচনা করব।
অন্যায় থেকে বাঁচতে
কারো জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মজলুম ব্যক্তি, শাসকের কাছে জালিমের বিরুদ্ধে বিস্তারিত অভিযোগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তার যে দোষ রয়েছে তা সবিস্তারে তুলে ধরার অনুমতি আছে।
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বেরিয়ে আল-আসওয়াফ নামক স্থানে এক আনসারি নারীর কাছে উপস্থিত হই। তখন ওই নারী তার দুটি মেয়েকে নিয়ে রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, এরা সাবিত ইবনে কায়িসের (রা.)-এর কন্যা। তিনি আপনার সঙ্গে উহুদ যুদ্ধে যোগদান করে শহীদ হন। এদের চাচা এদের সব সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে এবং এদের জন্য কিছুই রাখেনি। হে আল্লাহর রাসুল, এ বিষয়ে আপনি কী বলেন? আল্লাহর শপথ, এদের সম্পত্তি না থাকলে এদের বিবাহ দেওয়া সম্ভব নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এদের ফয়সালা আল্লাহই দেবেন। বর্ণনাকারী বলেন, ইতিমধ্যে সুরা নিসার আয়াত অবতীর্ণ হয়। ‘তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের বিধান দিচ্ছেন…। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১-১৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা ওই নারী ও তার প্রতিপক্ষকে আমার কাছে ডেকে আনো। তিনি মেয়ে দুটির চাচাকে বলেন, সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ এদের দিয়ে দাও, এদের মাকে দাও আট ভাগের এক ভাগ এবং অবশিষ্ট সম্পদ তোমার। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৯১)
হাদিসে তাদের চাচার অত্যাচারের বিরুদ্ধে রাসুলের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, অন্যায় থেকে বাঁচার জন্য দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা বৈধ।
অসৎ কাজ থেকে বারণ করার জন্য
কাউকে অসৎ কাজ থেকে ফেরানোর জন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া। যখন তার উদ্দেশ্য হবে সেই অন্যায়কারী ওই ব্যক্তিকে ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনা। তখন তার জন্য ওই ব্যক্তির দোষ বর্ণনা জায়েজ।
ফতোয়া জানার জন্য
কোনো বিজ্ঞ মুফতির কাছে মাসআলা জানতে চাওয়া, অর্থাৎ এভাবে বলা যে অমুক ব্যক্তি আমার ওপর অন্যায় করেছে, সে আমার প্রাপ্য কেড়ে নিয়েছে অথবা সে আমাকে ভালো কাজে বাধা দান করে। সে ক্ষেত্রে আমার করণীয় কী? এভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে জানতে চাওয়া বৈধ। তার খারাপ স্বভাবের ফিরিস্তি বয়ান করা যাবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মুআবিয়া (রা.)-এর মা হিন্দা আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলেন, আবু সুফিয়ান (রা.) একজন কৃপণ ব্যক্তি। এ অবস্থায় আমি যদি তার সম্পদ থেকে গোপনে কিছু গ্রহণ করি, তাতে কি গুনাহ হবে? তিনি বলেন, তুমি তোমার ও সন্তানদের প্রয়োজন অনুযায়ী ন্যায়ভাবে গ্রহণ করতে পারো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২১১)
পরামর্শ চাইলে
কেউ যদি পাত্র-পাত্রী নির্বাচন বা অন্য কোনো বিষয়ে পরামর্শ চায়, তাহলে প্রকৃত জিনিস বলতে অসুবিধা নেই। ফাতেমা বিনতে কায়স (রা.) যখন বিবাহের ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর কাছে পরামর্শ চেয়েছেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুআবিয়া তো একজন গরিব মানুষ, তার কোনো ধনসম্পদ নেই। আর আবু জাহম, সে তো স্ত্রীদের প্রহারকারী। তবে ওসামা তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারো। [এখানে আবু জাহম ও মুআবিয়া (রা.)-এর দোষ বর্ণনা করা হয়েছে] (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৬০৪)
সাধারণ মুসলমানদের সতর্ক করার জন্য
যদি কোনো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি কোনো ফাসেক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে, তাহলে সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে সতর্ক করার জন্য তার দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা বৈধ। যাতে সেই ফাসেক ব্যক্তির রোগ তার ভেতর সংক্রমিত না হয়, আর সে সম্মানিত ব্যক্তি তার সঙ্গে চলার কারণে অভিযুক্ত না হয়। কিংবা কেউ কোনো শ্রমিক ভাড়া নেয়, আর তার ভেতর যদি কোনো গোপন ত্রুটি থাকে, যেমন চুরি করা, খিয়ানত করা বা কোনো ব্যক্তি তার পণ্যে ভেজাল মিশ্রণ করে—তাহলে এসব বিষয়ে সেবা গ্রহণকারীকে বলতে সমস্যা নেই; বরং ক্ষেত্রবিশেষে বলা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
উপাধিতে প্রসিদ্ধ হলে
কেউ কোনো মন্দ উপাধিতে যদি প্রসিদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে সেই উপাধিতে ডাকতে সমস্যা নেই। তবে উপাধি না বলে বিকল্প কোনোভাবে যদি তাকে চেনানো যায় তাহলে সেই মন্দ উপাধি না বলাই উত্তম। যেমন ল্যাংড়া, খোঁড়া, অন্ধ—এ জাতীয় শব্দ দ্বারা কারো পরিচয় বলা। রাসুল (সা.)-এর একজন অন্ধ সাহাবি ছিলেন। যাকে অন্ধ বলেই ডাকা হতো। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রালুলুল্লাহ (সা.)-এর দুজন মুয়াজ্জিন ছিল। বিলাল (রা.) ও অন্ধ আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭২৯)
প্রকাশ্যে অপরাধকারী
যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে অবলীলায় পাপাচার করে ঘুরে বেড়ায়, তার ব্যাপারে সমালোচনা করতে সমস্যা নেই।
(মুখতাসারু মিনহাজুল কাসিদন, রিয়াজুস সালেহিন)