হঠাৎ স্বর্ণের দর পতন!

সারাদেশ

বিশ্ববাজারে মঙ্গলবার সোনার দামে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। মাত্র একদিনে দাম কমেছে ৩ শতাংশেরও বেশি।

বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের শক্তিশালী অবস্থান এবং বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতাই এই পতনের মূল কারণ। এর আগে সুদের হার কমার প্রত্যাশা এবং নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

রেকর্ড ভাঙার মাত্র একদিন পরই, ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম হু-হু করে নেমে আসে। ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছানোর পর বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলতে শুরু করায় স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ২ শতাংশেরও বেশি কমে যায়।

নিউইয়র্ক সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে স্পট গোল্ডের দাম ৩.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় প্রতি আউন্সে ৪,২০৩.৮৯ ডলারে, যা ২০২০ সালের নভেম্বরের পর সবচেয়ে বড় পতন। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য ইউএস গোল্ড ফিউচার্সের দামও ৩.৩ শতাংশ কমে প্রতি আউন্সে ৪,২১৭.৮০ ডলারে নেমে এসেছে।

সোমবার সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ, অর্থাৎ প্রতি আউন্সে ৪,৩৮১.২১ ডলারে পৌঁছেছিল। ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা, সুদের হার কমানোর জল্পনা এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারাবাহিক স্বর্ণ ক্রয়ের কারণে চলতি বছরেই এর দাম বেড়েছিল ৬০ শতাংশেরও বেশি।

স্বাধীন ধাতু ব্যবসায়ী তাই ওং বলেন, “গতকালও সোনার দাম সামান্য কমলেই ক্রেতারা তা কিনে নিচ্ছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে মূল্যের চরম ওঠানামা বাজারে এক ধরনের সতর্কতা তৈরি করেছে, যা অনেককে স্বল্পমেয়াদে মুনাফা তুলে নিতে উৎসাহিত করেছে।”

ডলার সূচকও মঙ্গলবার ০.৪ শতাংশ বেড়েছে, ফলে অন্যান্য মুদ্রায় লেনদেনকারীদের জন্য সোনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এদিকে ওয়াল স্ট্রিটে করপোরেট আয়ের ইতিবাচক ধারা বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা ফিরিয়ে এনেছে।

কিটকো মেটালসের সিনিয়র বিশ্লেষক জিম উইকফ এক প্রতিবেদনে বলেন, “সপ্তাহের শুরুতে বাজারে ঝুঁকি নেওয়ার আগ্রহ বেড়েছে, যা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত ধাতুগুলোর (সোনা, রুপা) জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”

বর্তমানে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) প্রকাশের অপেক্ষায় আছেন, যা সরকারি অচলাবস্থার কারণে বিলম্বিত হয়েছে। সেপ্টেম্বরে এই সূচকে বার্ষিক ভিত্তিতে ৩.১ শতাংশ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, আগামী সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ তাদের বৈঠকে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পারে। সাধারণত কম সুদের হারের পরিবেশে সোনার মতো অউৎপাদনশীল সম্পদের দাম বাড়ে।

অন্যদিকে, মঙ্গলবার রুপার দামেও বড় পতন দেখা গেছে। স্পট সিলভারের দাম ৫.২ শতাংশ কমে প্রতি আউন্সে ৪৯.৬৮ ডলারে নেমে আসে। এ প্রসঙ্গে ওং বলেন, “রুপা আজ ভীষণভাবে হোঁচট খেয়েছে, আর সেটাই পুরো ধাতব বাজারকে নিচের দিকে টেনে এনেছে।”

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডলার শক্তিশালী থাকা এবং বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তোলার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে স্বর্ণ ও রুপার দামে আরও কিছুদিন অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *