দুই ছাত্র আইসিইউতে, হাসপাতালে শত ছাত্রের আর্তনাদ

সারাদেশ

ভিডিও ফুটেজটি ৫০ সেকেন্ডের। সেখানে দেখা গেছে, সাদা ও হলুদ টি-শার্ট পরা দুই ছাত্রকে

একটি বাড়ির ছাদে সাত-আটজন মিলে পেটাচ্ছে। একজনের হাতে রামদা। তিনি কোপাতে কোপাতে এক পর্যায়ে ছাদ থেকেই ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন দুই ছাত্রকে।

ফেলে দেওয়ার পরও কমেনি গ্রামবাসীর আক্রোশ। হাতে থাকা ইটের টুকরা নিচে ছুড়ে আবার রক্তাক্ত করা হচ্ছিল সেই দুজনকে।

ফেলে দেওয়া দুই ছাত্রের একজন রাজিউর রহমান রাজু। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন, তবে কোন বিভাগের জানা যায়নি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন রাজু। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুজনকে রামদা দিয়ে চারদিক থেকে কোপানো হয়। এক পর্যায়ে তারা ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।’

শুধু রাজু নন; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী। এর মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। কেউ কোপ খেয়েছেন হাতে, কেউবা মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এখানে আহত অবস্থায় এসেছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। কারও কারও শরীরে ছিল ধারালো অস্ত্রের আঘাত। গুরুতর আহত কয়েকজনকে আমরা চট্টগ্রাম নগরে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা মেডিকেল সেন্টার থেকে ৯ বার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহতদের নিয়ে বাস পাঠিয়েছি ৯টা।’

আরও পড়ুনঃ ‘আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের ভোটের বাক্স হবে একটাই’
আক্রোশের ভয়াবহতা ভিডিও ফুটেজে
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়ে আক্রোশের ভয়াবহতা। একটি ফুটেজে দেখা গেছে, ২ নম্বর গেট সংলগ্ন একটি ধানক্ষেতে দলছুট হয়ে বসে আছেন এক শিক্ষার্থী। হঠাৎ চারজনের একটি দল তাঁকে রামদা দিয়ে আক্রমণ করে। কোপের হাত থেকে বাঁচতে ওই ছাত্র দৌড় দেন। তার পরও নিস্তার মেলেনি। ২ মিনিটের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, কমলা রঙের টি-শার্ট পরা এক শিক্ষার্থীকে একটি বাসার সামনে রামদা নিয়ে কোপাচ্ছেন জোবরা গ্রামের এক বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যরা লাঠি হাতে পেটাচ্ছে মাটিতে পড়ে যাওয়া সেই শিক্ষার্থীকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গতকালের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের হাতে দেখা গেছে এমন রামদা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফ বলেন, আগেও অনেকবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের বিরোধ হয়েছে। তবে এভাবে রামদা দিয়ে গণহারে আক্রমণের ঘটনা এটিই প্রথম। রামদাসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে যারা হামলা করেছে, তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে আইনের আওতায় আনা হবে।’

Suggested News

9 Things Your Foot Shape Reveals About You

7 Ridiculous Things That Get In The Way Of Good Love
আরও পড়ুনঃ গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে ছাত্রদলের মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা
আইসিইউতে দুই শিক্ষার্থী
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র নাইমুর রহমান। শরীরে গুরুতর আঘাত নিয়ে নগরের ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি তিনি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আরেক ছাত্র নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে আইসিইউতে রয়েছেন। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া পলাশ নামে এক ছাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) ওয়ার্ডে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এই তিনজন গুরুতর জখম হলেও অন্য আহতদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন প্রক্টর মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফ।

আহতদের আর্তনাদ
শনিবার মধ্যরাত থেকেই আহতদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসতে থাকে হাসপাতালে। যেসব শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার তাদের পাঠাতে থাকে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে। শনিবার রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন অন্তত ৩৫ শিক্ষার্থী। গতকাল সন্ধ্যায় এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় শতকের ঘর। দুদিনে শুধু এই হাসপাতালেই চিকিৎসা নেন ১১৫ জন। এর মধ্যে ২২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আলাউদ্দিন।

আরও পড়ুনঃ দ্বিতীয় প্রতিবেদনেও উঠে এলো হাসিনার গোপন বন্দিশালার ভয়াবহ তথ্য
এদিকে নগরের পার্ক ভিউ হাসপাতালে গতকাল ২৪ জনকে ভর্তি করা হয়। শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে নগরীর ন্যাশানাল হাসপাতালেও। সেখানে আইসিইউতে আছেন এক ছাত্র।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি ছাত্র তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটে ছিলাম। তখন আমাদের গ্রামবাসী ধাওয়া দেয়। যাঁকে সামনে পেয়েছে, তাঁকেই লাঠি, রড, গাছ দিয়ে মারধর করেছে। তাদের হামলায় আমার মাথা ফেটেছে, হাত ভেঙেছে।’ ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গ্রামবাসীর অনেকে রামদা দিয়ে ছাত্রদের কুপিয়েছে। তাদের ইটের আঘাতে আমার মাথা ফেটেছে। বাঁ চোখে আঘাত পেয়েছি। চোখ ফুলে গেছে। এখন ঝাপসা দেখছি।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসা ছাত্রদের কারও হাত ভেঙেছে, কারও মাথা ফেটেছে। কয়েকজনের জখম গুরুতর।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *