বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানকে বৈধতা দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় জায়েদ খান ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারের জন্যও এই পদে দায়িত্ব পালনের ওপর স্থিতিবস্থা জারি করেছেন। ফলে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে পারবেন না কেউ। সঙ্গে সঙ্গে আবেদনটি চার এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নায়িকা নিপুণের করা আপিলের শুনানি নিয়ে রোববার (৬ মার্চ) আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে আজ নিপুণের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান। অন্যদিকে জায়েদ খানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও জিবুল হক ভুইয়া।
চেম্বার আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিপুণের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান। তিনি জানান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নায়ক জয়েদ খানের বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় জায়েদ খান ও নিপুণের জন্যও এই পদে দায়িত্ব পালনের ওপর স্থিতিবস্থা জারি করেছেন। ফলে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে পারবেন না কেউ।
ব্যারিস্টার মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান আরও বলেন, মোটকথা হাইকোর্টের রায়ের পর নায়ক জায়েদ খান সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে যে দাবি করেছিলেন সেটি আর এখন পারবেন না।
জয়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। ৪ এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আসবে।
পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। যেহেতু জায়েদ খান দায়িত্ব পালন করে আসছেন বা আসছিলেন, সেহেতু তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন।
গত বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার।
এর আগের দিন বুধবার (২ মার্চ) জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করে শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ড যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, রায়ে সেটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।
গত ২৮ জানুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচন হয়। প্রাথমিক ফলাফলে সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় জায়েদ খানকে। পরে জায়েদের বিরুদ্ধে ‘টাকা দিয়ে ভোট কেনা’সহ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ আনেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ। এমনকি এ পদে পুনরায় ভোটের দাবিও তোলেন।
নিপুণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জায়েদ খানের পদ বা প্রার্থিতা বাতিল হবে কি না- সে বিষয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে এফডিসিতে বসে শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ড। এরপর বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন।
এরপরই আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ বলে দাবি করেন জায়েদ খান। গত ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ডে প্রার্থিতা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তিনি। রিটের শুনানি নিয়ে আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত ওইদিনই স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের সেই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে গত ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল আবেদন করেন নিপুণ। ৯ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানি শেষে শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। একইসঙ্গে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদের ওপর ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করা হয়। এসময়ের মধ্যে জায়েদ-নিপুণ কেউ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে পারবেন না বলে জানানো হয়।
এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ এবং স্থিতাবস্থা বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হাইকোর্টকে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।