ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর স্ত্রী ছিলেন পুরুষ !

সারাদেশ

কখনো কখনো কোনও গুজব শুধু সোরগোল তোলে না—আগুন ধরিয়ে দেয় রাষ্ট্রপ্রধানের ঘরেও। ঠিক যেমনটি ঘটেছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো এবং তার স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাক্রো-র জীবনে। তাদের বিরুদ্ধে এমন একটি দাবি উঠেছে, যা শুধু ব্যক্তিগত নয়—বিয়ের সম্পর্ক, পরিচয় ও অতীত ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বে।

ডানপন্থী মার্কিন পডকাস্টার ও অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার ক্যান্ডেস ওন্স দাবি করেছেন, ব্রিজিত আসলে জন্মেছিলেন জঁ-মিশেল ট্রগনিউ নামে—যা ব্রিজিতের বড় ভাইয়ের নাম। তার দাবি অনুযায়ী, ব্রিজিত একজন পুরুষ ছিলেন এবং পরবর্তীতে লিঙ্গ পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীতে রূপান্তরিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি নাকি অন্য একজন ব্যক্তির পরিচয় চুরি করে আজও বেঁচে আছেন। এই দাবিকে কেন্দ্র করে “Becoming Brigitte” নামে একটি সিরিজও তৈরি করেছেন ক্যান্ডেস। বসুন্ধরা টিস্যু – অশুদ্ধতার বিরুদ্ধে এক বিন্দুও ছাড় নয়।

এই অডিও সিরিজ ও সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক বিভ্রান্তি, ক্ষোভ এবং হাজারো কটাক্ষ। শুনতে যতটা নাটকীয়, বাস্তবে এর চেয়ে অনেক বেশি সম্মানহানিকর। ফলে এবার আর চুপ থাকেননি ম্যাক্রো দম্পতি।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার আদালতে ক্যান্ডেস ওন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন তারা। অভিযোগ, উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করতে এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে ক্যান্ডেস এই ভিত্তিহীন গল্প বানিয়েছেন। তাদের চেহারা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং বিয়ের ইতিহাসও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ম্যাক্রো দম্পতির ভাষায়, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ক্যান্ডেস এই গুজব ও কনটেন্ট মুছে ফেলেননি। বরং নিজের পডকাস্টে দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন, তিনি মামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তার মুখপাত্রের মন্তব্য আরও বিস্ফোরক—এটা নাকি একজন মার্কিন নাগরিকের বাক-স্বাধীনতা দমন করার চেষ্টা।

তবে এই মামলা এখন আর শুধুই ব্যক্তিগত মানহানির লড়াই নয়। এটা এক আন্তর্জাতিক নজির। কারণ ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধান ও তার স্ত্রী এবার দাঁড়াচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রভাবশালী ইনফ্লুয়েন্সারের বিরুদ্ধে।

যুক্তরাষ্ট্রে এমন মানহানির মামলায় জয় পেতে হলে প্রমাণ করতে হয়, বিবাদী ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যে বলেছেন অথবা যাচাই না করেই বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। এই কঠিন মানদণ্ডের সামনে দাঁড়িয়েই আইনি লড়াই করছেন ম্যাক্রো দম্পতি।

উল্লেখ্য, এই গুজব নতুন কিছু নয়। ২০২১ সালেই প্রথম ছড়ায় এটি। এরপর তা আলোচিত হয় জো রগান এবং টাকার কারলসনের মতো ডানপন্থী মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও। এমনকি গত বছর ফ্রান্সে এই ইস্যুতে দুই নারীকে মানহানির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, যদিও পরে আপিল আদালতে সেই রায় বাতিল হয়।

তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সরাসরি আইনি লড়াইয়ে নামলেন ব্রিজিত ম্যাক্রো। গুজব নয়, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যই তাঁদের এই পদক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *