রায় শুনে আদালতে যে আচরণ করছিলেন ওসি প্রদীপ

জাতীয়

বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনে কাঠগড়ায় ছটফট করতে থাকেন কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তবে পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী ছিলেন স্বাভাবিক।

এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় শুনে কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আসামি মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিন। এরপরে তারা অপর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নন্দ দুলাল রক্ষিতকে চড়-থাপড় মারতে থাকেন। এ সময় আইয়াজ বলতে থাকেন, আমাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় নন্দ দুলাল। সে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন। এতে এপিবিএনের তিন সদস্যসহ ৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে ৬ জনকে।

এর আগে ২টার দিকে এই মামলার ১৫ আসামিকে কঠোর নিরাপত্তায় আদালত চত্বরে আনা হয়। ২টা ২৫ মিনিটে এজলাসে এসে আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর মামলা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন বিচারক।

এরপর শুরু করেন অপরাধের পর্যবেক্ষণ বয়ান। সাক্ষ্য প্রমাণে কার কী অপরাধ দাঁড়িয়েছে সেসব তুলে ধরার পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অপরাধ অনুসারে সাজা ঘোষণাকালে প্রধান দুই অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

এদিকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার অন্যতম আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপের ফাঁসিসহ সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে আদালত প্রাঙ্গণে অব্স্থান নেন নির্যাতিত শত শত পরিবারের সদস্যরা।

তারা ‘খুনি প্রদীপের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’, ‘মেজর সিনহার খুনি প্রদীপের ফাঁসি চাই’, ‘২০০ মানুষ হত্যাকারীর প্রদীপের ফাঁসি চাই ‘ইত্যাদি বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সিনহা হত্যা মামলার রায়কে ঘিরে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেদিকে পুলিশের সর্বোচ্চ সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। আদালতে নিরাপত্তার স্বার্থে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৃষ্টির ৩৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এত দ্রুত কোনো হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। এ মামলায় ৮৩ সাক্ষীর মাঝে ৬৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর আগে হত্যা কিংবা ফৌজদারি কোনো মামলায় এত বিপুলসংখ্যক সাক্ষী নেওয়ার নজির নেই। তেমন নজির নেই এত স্বল্পসময়ে চার্জগঠন, শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনেরও। মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে আমরা এ মামলার সব বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা সিনহা হত্যার বিষয়টি প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আমাদের আশা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও অভিযুক্তরা। স্বল্পসময়ে সিনহা হত্যার রায় দেশে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *