নিউজ ডেস্ক: পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র্যাব) বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে সরকার এরইমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তবে এ নিষেধাজ্ঞা সহসাই প্রত্যাহার হচ্ছে না বলেও মনে করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রসেস কালকেই হবে না। সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমরা আমেরিকার সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাল্লাহ্, আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারবো, আমার বিশ্বাস র্যাবের মত একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে মার্কিন সরকার।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াত ও সরকারের লবিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে এ বিবৃতি দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনভাবে আমেরিকার সরকার র্যাব এবং সংস্থাটির কিছু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
অপপ্রচারের কারণে এ নিষেধাজ্ঞা এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন লবিস্ট প্রতিষ্ঠান, আমাদের প্রতিপক্ষের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান…; যারা মার্কিন সরকারের কাছে কেবল মিথ্যা তথ্য কিংবা অসত্য ঘটনা প্রকাশই করেনি, একইসঙ্গে পৃথিবীর বড় বড় মানবাধিকার সংস্থাকেও প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক করেছে যে, ‘র্যাব খুব খারাপ’ প্রতিষ্ঠান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র্যাব জনগণের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত হয়ে মানুষের সেবা করে। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে এরকম একটি ভালো প্রতিষ্ঠান যারা দেশের সন্ত্রাস, মাদক বন্ধ করেছে, মানবপাচার মোটামুটিভাবে বন্ধ করেছে তাদের ওপরই নিষেধাজ্ঞা এলো। মার্কিন সরকারের পলিসি হচ্ছে টেরোরিজম হিউম্যান ট্রাফিকিং ও ড্রাগ কমানো। র্যাব এই কাজগুলিই করে। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তারা এসব কাজ বিগত দিনেও করেছে। এরকম একটা বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু লোকজন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়ায় এ নিষেধাজ্ঞা দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের র্যাব এমন বাজে কাজ করেনি যে, তার জন্য তারা পৃথিবীর টেরোরিস্ট অর্গানাইশেন হিসেবে বিবেচিত হবে, বরং টেরোরিস্টের বিরুদ্ধে তাদের কাজ। র্যাবের কারণেই হলি আর্টিজানের পর থেকেই… স্বয়ং আমেরিকার স্ট্রেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলেছে- বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। হলি আর্টিজানের পরে আর কোনো লোক সন্ত্রাসবাদে মারা যায়নি। বাংলাদেশ এরকম দেশ যেখানে সন্ত্রাসবাদ একটা সময় খুব উত্তপ্ত ছিলো, সেই সন্ত্রাসী তৎপরতাও এখন কমেছে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অবহিত করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর আমেরিকার সরকার আমাকে জানিয়েছে। জানার পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করি। আমার আলাপ অত্যন্ত পজিটিভি ছিলো। এসব সমস্যা দূরীভূত করার জন্য যদি কোনো অভিযোগ থাকে তা নিরসনের জন্য আমাদের নাম্বার’স অব ডায়ালগ আছে। তিনি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন সেগুলো তিনি করবেন।
মন্ত্রী জানান, আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পার্টনারশিপ ডায়ালগের কাজ শুরু হবে। এপ্রিল মাসে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। তাছাড়া রয়েছে ইকোনমিক পার্টানারশিপ…। আমরা আমেরিকার সাথে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি।
শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে র্যাবকে বাদ দিতে কতিপয় এনজিওর চিঠির প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ১২টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছেন। বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা ও অনুমান এখানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা বলেছেন- বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম হিউম্যান রাইটস ভায়োলেট করছে।
ড. মোমেন বলেন, তাদের ভাষায় বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম অপকর্মে নিযুক্ত, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এজন্য তারা বাংলাদেশের র্যাবকে পিচকিপিংয়ে (শান্তিরক্ষী বাহিনীতে) না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। তারা গত নভেম্বরের ৮ তারিখে চিঠি দিয়েছেন। দুমাস হলো ইউএন এটা পেয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনের স্পোকপারসন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জাতিসংঘ যখনই কাউকে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নেয় তারা নিজের নিয়মে যাচাই-বাছাই করেই কাজটি দেয়’।
সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উদ্দেশ্যেই এ চিঠি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এসব অপপ্রচার এবং দূরভিসন্ধিমূলক কাজ বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে। র্যাব তো একটা ভালো প্রতিষ্ঠান। তাদের রিমরালাইজস করার জন্য এ অপচেষ্টা যারা করছে, আমি বিশ্বাস করি তারাই এজন্য দুঃখিত হবেন। এ রকম একটি ভালো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য যে অপতৎপরতা এ নিয়ে তারাই লজ্জিত হবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রধানের কাছে প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠি দিয়ে তারা দেশের সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছেন। তারা এও বলেছেন, বাংলাদেশের কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তারা রোহিঙ্গাকে প্রশ্রয় দেওয়া নিয়েও অপপ্রচার চালিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র ও দূরভিসন্ধিতে বিশ্বাস করে না। এই দেশটা আপনার আমার সবার। এই দেশের মঙ্গল কামনার দায়িত্বও সবার। দলের বিরুদ্ধে আপনি অভিযোগ অনুযোগ করতে পারেন। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে যারা এ ধরনের অপপ্রচার করেন তাদের প্রতি ধিক্কার। সেইম অন দেম। আপনার দলের কর্মীরা যারা মাঠে ময়দানে কাজ করে তারা এসব শুনলে আপনাদের নেতৃত্বেকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। বলবে- এ রকম অপকর্ম থেকে দূরে থাকুন। আমি সেদিনের প্রতীক্ষায় আছি।