ইসরায়েলকে পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগে বাধ্য করার দাবি ইরানসহ আরব বিশ্বের

আন্তর্জাতিক

বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি। এই যেমন—যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়া। ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হলেও তারা কখনই তা স্বীকার কিংবা অস্বীকার করেনি।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, কিছু দেশ পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারলে অন্যরা পারবে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে ১৯৬৮ সালের এক চুক্তিতে; যার নাম পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি)।

এই চুক্তি অনুযায়ী, যেকোনও দেশ কেবল শান্তিপূর্ণ বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরমাণু শক্তির ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু যেসব দেশের কাছে আগে থেকেই পরমাণু অস্ত্র আছে, তাদের বাইরে আর কোনও দেশ নতুন করে এই অস্ত্রের মালিক হতে পারবে না।

চুক্তিটির আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই এই চুক্তিতে সই করেছে। এমনকি ইরানও চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। তবে ইসরায়েল, ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ সুদান এই চুক্তিতে সই করেনি। আর উত্তর কোরিয়া শুরুতে সই করলেও পরে চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে।

চুক্তির শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এখন তারা যদি এতে যোগ দিতে চায়, তাহলে প্রথমেই তাদের অস্ত্র পরিত্যাগ করতে হবে। বিশ্বে নতুন স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে দক্ষিণ সুদান। কিন্তু এই দেশটির নিজস্ব কোনও পারমাণবিক কর্মসূচি নেই।

ইসরায়েল চুক্তিতে সই করেনি, কারণ তারা নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ‌‘ধূম্রজাল’ তৈরির নীতি অনুসরণ করছে। আর এটা তারা করছে শত্রুদের বিভ্রান্ত করার কৌশল হিসেবে।

এনপিটি চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলকে নিজের পারমাণবিক স্থাপনায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পরিদর্শনের অনুমতি দিতে হবে। কিন্তু ইসরায়েল কখনই এই অনুমতি দেয়নি।

ইসরায়েলকে পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগে বাধ্য এবং তাদের কর্মসূচি স্বচ্ছ করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে ইরানসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। তারা মনে করে, ইসরায়েলের কথিত অস্ত্রভাণ্ডারই ওই অঞ্চলে উত্তেজনা ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।

আর ইরান সবসময় দাবি করছে, তারা পরমাণু অস্ত্র বানাতে চায় না এবং তাদের কাছে এমন কোনও অস্ত্রও নেই। তবে অনেক দেশ ইরানের এই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহপোষণ করে।

ইরান গোপনে এমন একটি পারমাণবিক কর্মসূচি চালাচ্ছে; যা এনপিটি চুক্তি অনুযায়ী অনুমোদিত নয় বলে ২০০২ সালে জানা যায়। এই ঘটনা এক দীর্ঘ সংকটের জন্ম দেয়। সেই ঘটনাই আজকের পরিস্থিতির অন্যতম ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র: বিবিসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *