৮৫ বছর পর আজান

আন্তর্জাতিক

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার কুপ্রেস পৌরসভার রাভনো গ্রামের মানুষজনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এবার বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।

৮৫ বছর আগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সেই ঐতিহাসিক রাভনো মসজিদ আবারও দাঁড়িয়ে গেছে নতুন রূপে—নতুন গৌরবে।

১৭শ শতকে খোদাই করা পাথরে নির্মিত এ মসজিদ শুধু একটি উপাসনালয় ছিল না, ছিল রাভনো ও কুপ্রেসের মানুষের হৃদয়স্পন্দন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রাণকেন্দ্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় এর পাথরের গম্বুজ ভেঙে পড়ে, দেয়ালগুলো ধসে যায়, মিনার নিঃশব্দে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। প্রায় আট দশক ধরে এর ধ্বংসাবশেষ নিঃশব্দ সাক্ষীর মতো দাঁড়িয়ে ছিল, যেন হারানো স্মৃতির প্রতীক হয়ে মুসলমানদের হৃদয়ে বেদনার ছাপ রেখে দিত। তবে সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে ২০২৪ সালের ১৭ মে।

স্থানীয় মুসলমানদের অবিচল প্রচেষ্টা এবং ঐকান্তিক প্রয়াসে শুরু হয় মসজিদ পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় নতুন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, পৌরসভা, বেসরকারি কোম্পানি ও উদার ব্যক্তিগত দাতাদের পাশাপাশি ক্রোয়েশিয়া ও মন্টিনেগ্রোর মুসলিম সম্প্রদায়ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে এই মহত উদ্যোগে।

স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মুসলিম ভ্রাতৃত্বের মিলিত সহায়তায় আজ ধ্বংসস্তূপের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এক নবনির্মিত সৌধ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ইসলামিক কমিউনিটির সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. হুসেইন কাভাজোভিচ।

এদিন রাভনোর আকাশে আবারও ভেসে উঠবে আজানের সুমধুর ধ্বনি, যা হবে বহু বছরের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণের মুহূর্ত। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, এই পুনর্জাগরণ শুধু একটি মসজিদের নয়; বরং পুরো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, আস্থা ও ঐক্যের প্রতীক। ৮৫ বছরের দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে আবারও মিনার থেকে ধ্বনিত হবে ‘আল্লাহু আকবার’ প্রমাণ করে—ঈমানের আলো কখনো নিভে যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *