অভাবের সংসারে হাল ধরতে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারেননি শাহীন হাওলাদার। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করলেও সর্বশেষ গাড়ি চালানো ও ঢাকার গুলিস্তানে রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। জুলাই আন্দোলন শুরু হলে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন।
গত বছরের ২৫ আগস্ট সচিবালয়ের সামনে হওয়া সংঘর্ষে ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হন তিনি। তাকে হারিয়ে তিন সন্তান নিয়ে গভীর সংকটে পড়েছেন স্ত্রী রিক্তা বেগম।
শাহিন বাগেরহাটের মোংলা থানার কচুবুনিয়া গ্রামের সোবাহান হাওলাদার ও কুসুম বেগম দম্পতির বড় ছেলে।
জানা গেছে, গত বছরের ২৫ আগস্ট রাজধানীর সচিবালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও আনসার সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেখানেই নিহত হন শাহীন।
রিক্তা বেগম বলেন, আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলা হতে দেখে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান শাহীন। এ সময় পেছন থেকে কয়েকজন আনসার সদস্য তাকে মাথায় এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে বমি করে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন তাকে। পরে ৪ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়।
শহীদ শাহীনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের নিয়ে গভীর সংকটে পড়েছেন স্ত্রী রিক্তা। তিনি বলেন, আমার ছেলে ও স্বামী প্রতিদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেত। আমি তাদের নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকতাম। বেশি আতঙ্কে থাকতাম ছেলেকে নিয়ে—কোন সময় ছেলেটির জীবন চলে যায়। কিন্তু ছেলের জীবন গেল না, গেল আমার স্বামীর জীবন। তাও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর। এখন আমাদের দেখার মতো আর কেউ রইল না।
রিক্তা বেগম বলেন, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পেলেও স্বামীর করে যাওয়া ঋণ এখনো শোধ হয়নি। আর কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি ও তিন সন্তান নিয়ে কোনোমতে দিন পার করছি। সরকারের কাছে দাবি, তারা যেন আমার সন্তানের পড়াশোনা ও আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়।