সামনে আসল যে নতুন তথ্য, খামেনি নিজেই দিয়েছিলেন

আন্তর্জাতিক

সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে ১২ দিনের যুদ্ধের সময় তেহরান কিভাবে যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা করেছিল তার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেছেন দেশটির সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ।

তিনি জানান, ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি ইরানের সিদ্ধান্তমূলক হামলা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যার কারণে মাত্র ১২ দিনের যুদ্ধের পর ইসরায়েল এবং ওয়াশিংটন উভয়েই যুদ্ধবিরতি চাইতে বাধ্য হয়েছিল।

১৩ জুন ভোরে ইরান হতবাক হয়ে যায় যখন আমেরিকার সমর্থনে ইসরায়েল তেহরানের আবাসিক ভবনগুলিতে বিমান হামলা চালায় এবং তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতাকে অকার্যকর করার চেষ্টায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ ইরানি জেনারেলকে হত্যা করে।

তেহরান টাইমস জানতে পারে, আমেরিকান কর্মকর্তারা পূর্বে ইরানকে আশ্বস্ত করেছিলেন, পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত কোনও যুদ্ধ শুরু হবে না। হঠাৎ ইসরায়েলি হামলার কয়েকদিন আগেই আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। ২২ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেয়, যুদ্ধের প্রথম দিনগুলিতে ইসরায়েলের হামলা চালানো পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে বোমাবর্ষণ করে।

“(শীর্ষ জেনারেলদের) হত্যাকাণ্ডের ৩-৪ ঘণ্টা পরে সর্বোচ্চ নেতা নতুন কমান্ডার নিয়োগ দেন। তিনি নবনিযুক্ত কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠান, ব্যক্তিগতভাবে তাদের ব্রিফ করেন, নির্দেশনা দেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করেন,” বলেন কালিবাফ।

ইরানি স্পিকার আরও জানান, আয়াতুল্লাহ খামেনি ১৯৮০-এর দশকে সাদ্দাম হোসেনের অধীনে ইরাক কর্তৃক দক্ষিণ ইরান আক্রমণের সময় যে ভূমিকা পালন করেছিলেন, এবারও সেই একই ভূমিকা পালন করেন।

আয়াতুল্লাহ খামেনি ইরানি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তৎপর ছিলেন। প্রাথমিক ইসরায়েলি বিমান হামলার কয়েক ঘন্টা পরে তিনি একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে ইরানীদের বলেন, ইসরায়েলকে তার অপরাধের জন্য মূল্য দিতে হবে এবং দুর্দশাগ্রস্ত হতে হবে।

যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই ইরানের প্রতিশোধ শুরু হয়। ফিলিস্তিনের দখলকৃত অঞ্চলগুলিতে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় এবং এসব ক্ষেপণাস্ত্র কৌশলগত ইসরায়েলি স্থাপনাগুলিতে আঘাত হানে। যুদ্ধের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই দৃশ্য অব্যাহত ছিল।

ইরানের হামলার পরের দৃশ্য লুকানোর জন্য ইসরাইলি সরকার পুরোদমে তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু যুদ্ধের সময় এবং পরে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলিতে দেখা যায়, হিব্রু মিডিয়ার প্রতিবেদনের তুলনায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

একজন আমেরিকান বিশ্লেষক এবং অধিকৃত অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক এবং সংযোগ থাকা প্রাক্তন সামরিক ব্যক্তিত্ব বলেছেন, তেল আবিবের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্য টেলিগ্রাফের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে আরও প্রকাশিত হয়েছে, অন্তত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যান্য তথ্য অনুসারে, কিরিয়া কম্পাউন্ডে অবস্থিত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর স্নায়ু কেন্দ্র ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ে আঘাত হেনেছে এবং এটি কয়েক মাস ধরে পুনর্নির্মাণ করতে হবে। অন্যান্য ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে আম্মান ও মোসাদের সদর দপ্তর, ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট, পাশাপাশি হাইফায় তেল শোধনাগার এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

সাক্ষাৎকারে, কালিবাফ বলেন, ইসরায়েল প্রকাশ্যে যতটুকু ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে তার চেয়েও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ‘‘যুদ্ধের শেষ দিনগুলিতে, আমাদের ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে,’’ বলেন তিনি।

ইসরায়েলের প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা সম্ভবত অন্তত ৫০০-তে পৌঁছেছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত সংখ্যা ২৯-এর চেয়ে অনেক বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *