যেভাবে সিসি ক্যামেরা হ্যাক করে শত্রুদের টার্গেট নির্ধারণ করছে ইরান

আন্তর্জাতিক

ঘরোয়া নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত সিসিটিভিই এখন ইসরায়েলিদের জন্য রীতিমতো হুমকির উৎস হয়ে উঠেছে। দেশটির অভিযোগ—ইরান পরিকল্পিতভাবে ইসরায়েলের ঘরে ঘরে বসানো সিসি ক্যামেরা হ্যাক করে বিভিন্ন জায়গায় হামলার টার্গেট নির্ধারণ করছে।

ইসরায়েলের একাধিক রেডিও চ্যানেলে সম্প্রতি এমন সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে—তেহরানের হ্যাকাররা ইসরায়েলি নাগরিকদের ব্যক্তিগত ক্যামেরা হ্যাক করে সেখান থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে। শুধু সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করাই নয়, অতীত হামলার ক্ষয়ক্ষতিও বুঝে নিতে এসব ভিডিও ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে তেলআবিবে মিসাইল হামলার পর ইসরায়েলের এক সাবেক সাইবার নিরাপত্তা কর্মকর্তা জনগণকে সতর্ক করে বলেন, “ঘরের সিসি ক্যামেরা হয় বন্ধ রাখুন, নাহয় পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করুন। কারণ এসব ক্যামেরাই হয়ে উঠেছে আমাদের দুর্বলতা।”

তিনি আরও বলেন, হ্যাক হওয়া ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ইরানি গোয়েন্দারা খুব সহজেই বুঝে নিতে পারে—মিসাইল কোথায় আঘাত করেছে, কতটা ক্ষতি হয়েছে এবং কীভাবে আরও নিখুঁতভাবে ভবিষ্যতে হামলা চালানো যায়।

ইসরায়েলের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে—যুদ্ধ কৌশলের অংশ হিসেবে তেহরান ইন্টারনেট সংযুক্ত সিসি ক্যামেরাগুলোকে বারবার টার্গেট করছে। এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের নাগরিক ও সরকারি পর্যায়ে বহুবার হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।

তবে এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার আগেও হামাস ইসরায়েলের সীমান্ত এলাকার বহু ব্যক্তিগত ক্যামেরা হ্যাক করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছিল। তখনও হাজার হাজার সরকারি ও ব্যক্তিগত ক্যামেরা হয়ে উঠেছিল তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের অংশ—এমন মন্তব্যই এসেছিল ইসরায়েলের তৎকালীন সাইবার প্রধানের পক্ষ থেকে।

সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় ইসরায়েলের বহু বাসিন্দা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘরে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে থাকেন। কিন্তু দুর্বল পাসওয়ার্ড ও নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় এসব ডিভাইস শত্রুপক্ষ সহজেই হ্যাক করে ফেলছে। ফলে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থানও ফাঁস হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, সাইবার যুদ্ধের জবাবে ইরানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি ইসরায়েলি হ্যাকার গ্রুপ ‘প্রিডেটরি স্প্যারো’ দাবি করেছে, তারা ইরানের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ নোবিটেক্স থেকে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার চুরি করেছে। এ ছাড়া ইরানের দুটি প্রধান ব্যাংকেও চালানো হয়েছে সাইবার হামলা।

বর্তমান পরিস্থিতি একধরনের ‘সাইবার ফ্রন্টলাইনে’ রূপ নিয়েছে, যেখানে শুধু মিসাইল নয়—ডেটা, ফুটেজ আর ক্যামেরাও হয়ে উঠেছে অস্ত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *