সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক ধানমণ্ডি এলাকাতেই প্রায় ১১ মাস আত্মগোপনে ছিলেন। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিনও তিনি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এই খবর পাওয়ার পর তিনিও বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর তিনি ধানমণ্ডি এলাকাতেই তার নিকটআত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। আত্মগোপনে থাকাকালীন তাকে অন্তত চারটি মামলায় আসামি করা হয়। খায়রুল হক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসায় তিনি অনেকটা গোপনেই ধানমণ্ডির নায়েম রোডের-২ নম্বর বাসায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে তিনি সেখানেই পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি. সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি খায়রুল হকের অবস্থান সম্পর্কে জানতেন। এছাড়া বর্তমান আইন কমিশনেও খায়রুল হকের এক আত্মীয় দায়িত্ব পালন করছেন। উল্লেখ্য যে, বর্তমান আইন কমিশন গঠন করা হয় ৫ই আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো জানিয়েছে, খায়রুল হক আত্মগোপনে থাকলেও তিনি নজরদারিতে ছিলেন। গোয়েন্দারা তাকে বিভিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছিল। তার গতিবিধি অনুসরণ করছিল। সর্বশেষ সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে অনুমতি আসার পর ডিবি’র একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল রাতে তাকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করে ডিবি। এদিন ডিবি তাকে রিমান্ডের আবেদন না করে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখার আবেদন করে। শুনানি শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গতকাল দুপুর তিনটা। ঢাকা কলেজ ঘেঁষা একটি রোড দিয়ে প্রবেশ করে কিছুদূর সামনে গিয়ে দেখা মিলল নায়েম রোডের। এই রোডের ২ নম্বর বাড়িটির নাম বায়তুল সালাম। ৬তলা এই ভবনটি সাবেক এই বিচারপতির নিজের বাসা বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। বাড়ির সামনের রাস্তায় সুনসান নীরবতা। যানবাহন চলাচলও সীমিত। মাঝেমধ্যে কয়েকটি ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে ও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এর বাইরে মাঝেমধ্যে প্রাইভেটকার বিভিন্ন ভবন থেকে বের হয় আবার ভেতরে প্রবেশ করছিল। খায়রুল হকের বাড়ির বামপাশে রয়েছে বসতি ক্যামেলিয়া ও ডান পাশে আরমান নেস্ট নামের দু’টি বহুতল ভবন। পাশাপাশি তিনটি ভবন হলেও ভবনের বাসিন্দাদের কারও দেখা মিলেনি। খায়রুল হকের বাসায় প্রবেশ করার জন্য ফটকে কড়া নাড়লে নিরাপত্তাকর্মী এসে বললেন ভেতরে কেউ থাকে না। কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারবো না। কথা না বাড়িয়ে এক নারীর ইশারায় নিরাপত্তাকর্মী ভেতরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর এসে ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। ভেতরে কেউ নাই এমন তথ্য নিরাপত্তাকর্মী জানালেও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাহিরে থেকে ভবনের প্রতিটি তলায় লোকজন ছিল। কয়েকঘণ্টা অপেক্ষা করেও ভবনের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ সময়ে কেউ ভেতর থেকে বাহিরে আর বাহির থেকে ভেতরে প্রবেশ করেননি। স্থানীয় রিকশাচালক আওলাদ। যিনি বিচারপতির বাসার সামনেই বহু বছর ধরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করেন। তিনি মানবজনিকে বলেন, এই এলাকার মানুষকে রাস্তাঘাটে দেখা যায় না। শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজন ও পেশার তাগিদে তারা বের হন আর প্রবেশ করেন। এক বাসার বাসিন্দাদের সঙ্গে আরেক বাসার বাসিন্দাদের তেমন সখ্য নাই। তিনি বলেন, সকাল ৬টার কিছুক্ষণ আগে আমি এখানে আসি। এসে দেখি দু’টি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে। আর রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছেন কয়েকজন যুবক। তাদের শরীরে পুলিশের পোশাক ছিল না। সিভিলে থাকলেও তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে তারা ডিবি সদস্য। এ সময় খায়রুল হকের বাসার ভেতরেও কয়েকজন অবস্থান করছিলেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময় পরে তারা সাবেক এই বিচারপতিকে আটক করে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যান।