যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে পরমাণু শক্তিধর মুসলিম দেশ

আন্তর্জাতিক

বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি অনুযায়ী, ইসলামাবাদ এমন একটি দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে সরাসরি আঘাত হানতে সক্ষম হতে পারে। ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের এই সামরিক উদ্যোগ ও ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে ওয়াশিংটন। কারণ, যদি ইসলামাবাদ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) নির্মাণে সফল হয়, তবে এটি শুধু ভারতের প্রতি নয়—বরং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যও সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, পাকিস্তান এখন যে ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম। এ ধরনের পদক্ষেপ দেশটিকে আর ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ নয়, বরং একটি ‘সম্পূর্ণ পারমাণবিক প্রতিপক্ষ’ হিসেবে বিবেচনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তান তার এই কর্মসূচিকে ভারতের সামরিক আধিপত্যের পাল্টা হিসেবে ব্যাখ্যা দিলেও, পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা একে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য বিপজ্জনক মনে করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের লক্ষ্য কেবল ভারত নয়—এটি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত হিসাবেও প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষ করে, ইসলামাবাদের বার্তা স্পষ্ট: যদি ওয়াশিংটন পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় আগাম হামলার চিন্তা করে, তাহলে তা হবে বিপজ্জনক এক প্রতিক্রিয়া টানার মতো পদক্ষেপ।

পাকিস্তানের এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৭০-এর দশকে ভারতের পরমাণু পরীক্ষা (১৯৭৪) পাকিস্তানের এই কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৯৮ সালে ছয়টি সফল পারমাণবিক বিস্ফোরণের মাধ্যমে ইসলামাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

বর্তমানে পাকিস্তানের কাছে প্রায় ১৬৫টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অস্ত্রাগারে রয়েছে কৌশলগত বোমা ও স্বল্প থেকে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যা তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। দেশটি এখনও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও বিস্ফোরণ নিষেধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি, যা তাদের ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা অগ্রাধিকার’-এর প্রতিফলন বলেই দেখা হচ্ছে।

প্রতিবেদন আরও জানায়, যখন চীন দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার সম্প্রসারণ করছে এবং রাশিয়া অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নীতিকে উপেক্ষা করছে, তখন পাকিস্তানকে যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে তিনটি বড় পারমাণবিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে—চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি এখন পাকিস্তানকেও যুক্ত করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নয়, বরং বৈশ্বিক কূটনীতির জন্যও এক নতুন নিরাপত্তা সংকেত বহন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *