ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন যুদ্ধ!

আন্তর্জাতিক

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গত সপ্তাহের তীব্র সামরিক উত্তেজনার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশ ‘সম্পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ পৌঁছেছে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুদ্ধ থেমেছে ঠিকই, কিন্তু শুরু হয়েছে নতুন যুদ্ধ—কে কাকে দায়ী করবে, কে কেমনভাবে যুদ্ধের ব্যাখ্যা দেবে, সেই ‘বর্ণনার যুদ্ধ’। খবর: ডন।

গত ২২ এপ্রিল, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহেলগামে ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই ভারত একে সীমান্ত পেরিয়ে আসা সন্ত্রাসীদের কাজ বলে দাবি করে। পাকিস্তান এই অভিযোগ তীব্রভাবে অস্বীকার করে এবং নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি জানায়। এরপরই ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ড্রোন হামলা চালায়, যাতে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। উত্তেজনা চরমে পৌঁছে, দুই দেশই একে অপরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, দুই দেশের মধ্যে একটি ‘সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি’ হয়েছে। তবে উভয় দেশ থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। পরে আবারও দুই পক্ষই শান্তির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। দ্য গার্ডিয়ান-এ বিশ্লেষক জেসন বার্ক লেখেন, “এই শান্তি আনার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবই মুখ্য। এতে রাশিয়া ও চীন খুশি নয়। প্রাণহানি তুলনামূলক কম থাকলেও অর্থনৈতিক ক্ষতির ভয়ই বড় ভূমিকা রেখেছে।”

আল জাজিরা লিখেছে, “যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে মোদি সরকার যেন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পিছু হটেছে। এমনকি কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব ভারতের বহুকালের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”

দ্য ওয়্যার বলছে, “যুদ্ধবিরতির কারিগরি আলোচনায় সরাসরি বাইরের কোনো পক্ষ না থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত চাপের মাধ্যমেই দুই দেশের সামরিক বাহিনী কথা বলায় রাজি হয়।”

টাইম ম্যাগাজিন মন্তব্য করেছে, “আগে উপসাগরীয় দেশগুলো পাকিস্তানের প্রতি ধর্মীয় কারণে সহানুভূতিশীল থাকলেও এখন ভারতের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব সেখানে অনেক বেড়েছে। যুদ্ধ রুখতে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভূমিকা উপেক্ষা করা যাবে না।”

স্কাই নিউজ সতর্ক করে বলেছে, “গত দুই সপ্তাহে এমন সংঘর্ষ হয়েছে, যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র। যুদ্ধবিরতি হয়েছে বটে, কিন্তু এত সহজে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে—এমনটা ধরে নেওয়া যায় না।”

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বিশ্লেষণে জানায়, “যুদ্ধবিরতির ঘোষণা হয়েছে, কিন্তু তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। উভয় দেশই একদিকে যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা অস্বীকার করছে।”

যুদ্ধবিরতি আপাতত শান্তির বার্তা দিলেও, ভিতরে ভিতরে চলতে থাকা রাজনৈতিক কৌশল, আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের লড়াই এবং বহু বছরের বৈরিতার ইতিহাস এই দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে ভবিষ্যত সম্পর্ক কতটা স্থিতিশীল হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *