ভারতে আজানকে বলা হচ্ছে ‘শব্দদূষণ’, সরানো হল ১৫০০ মসজিদের মাইক

আন্তর্জাতিক

“আল্লাহু আকবার… আল্লাহু আকবার…” যুগের পর যুগ এই আত্মিক আহ্বান ভেসে এসেছে ভারতের আকাশে। কিন্তু এখন সেই পবিত্র আজানকেই ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন শব্দদূষণ আখ্যা দিয়ে দমন করার চেষ্টা করছে।

সম্প্রতি মুম্বাই শহরের প্রায় ১৫০০ মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে লাউডস্পিকার সরিয়ে নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তাদের দাবি, এটি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ। তবে প্রশ্ন উঠেছে—এটা কি সত্যিই পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা, নাকি সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ?

মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শহরের অনেক মসজিদে অভিযান চালিয়ে মাইক খুলে ফেলা হয়েছে। কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগ, শুধুমাত্র মসজিদগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে, যেখানে হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসবে তেমন কোনো বাধা দেওয়া হয় না। তারা এটিকে পক্ষপাতমূলক এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মুসলমানদের একটি প্রতিনিধি দল মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। তারা স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন, এটি একটি পরিকল্পিত বৈষম্য।

মুম্বাই পুলিশের কমিশনার দেবিন ভরাটী বলেন, যেসব স্থানে মাইক সরানো হয়েছে, সেগুলোতে তা আর পুনঃস্থাপন করা যাবে না। শুধু বিশেষ ধর্মীয় উৎসবের সময় অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত শব্দসীমার মধ্যে ব্যবহার করা যাবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষা ও নির্বাচনী কৌশলের অংশ। আজানের মতো পবিত্র ইসলামী আহ্বানকে শব্দদূষণ বলে দাগিয়ে দেওয়া শুধু ধর্মীয় স্বাধীনতাকেই আঘাত করে না, বরং ভারতের সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

মুম্বাইয়ের ধর্মীয় সংগঠন ও মুসলিম সমাজ এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। শহরজুড়ে ইতোমধ্যে আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে প্রশাসন।

প্রশ্ন রয়ে গেছে—এটা কি ভারতের সংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিফলন, নাকি হিন্দুত্ববাদী শাসনের বাস্তব রূপ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *