বিধ্বস্ত এফ-৭ বিজেআই সম্পর্কে জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য

সারাদেশ

উত্তরায় বিমানবাহিনীর যুুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আইএসপিআর জানায়, বিভিন্ন হাসপাতালে নিহতের সংখ্যা দুপুর পর্যন্ত ৩১ জন দাঁড়িয়েছে। আর আহতের সংখ্যা ১৬৫ জন।

এদিকে, উত্তরায় বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর মারা গেছেন। সোমবার (২১ জুলাই) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।

এর আগে গত এক দশকে এফ-৭ যুদ্ধবিমানের একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। মাইলস্টোনের দুর্ঘটনায় আবারও আলোচনায় এই বিমানের কার্যক্ষমতা, যান্ত্রিক ত্রুটি ও দুর্ঘটনার বিষয়টি।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ‑৭ মডেলের যুদ্ধবিমান এর আগেও দুবার বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজের পাইলট প্রাণ হারান। সবশেষ সোমবার রাজধানীর উত্তরায় একটি স্কুলে বিধ্বস্ত হয় এফ‑৭ উড়োজাহাজ। এতে এখন পর্যন্ত পাইলটসহ প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন।

২০০৮ সালের এপ্রিলে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল এলাকায় একটি এফ‑৭ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে উড়োজাহাজটির পাইলট বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার মরশেদ হাসান নিহত হন।

২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর টাঙ্গাইলেরই মধুপুরে এফ‑৭ বিজি মডেলের আরেকটি প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন পাইলট উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দীপু।

সবশেষ সোমবার এফ‑৭ বিজিআই মডেলের প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ওপর বিধ্বস্ত হলে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামসহ ৩১ জনে জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের অধিকাংশই শিশু। এ ছাড়া আহত হন দেড় শতাধিক।

ষাটের দশকে রাশিয়ার মিগ‑২১ যুদ্ধবিমানের নকশায় এফ‑৭ মডেলটি তৈরি করে চীন। ১৯৬৬ সাল থেকে এটি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের আকাশ প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২৩ সাল থেকে যুদ্ধবিমানটিতে ধীরে ধীরে অবসরে পাঠানো শুরু করে চীন।

বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, ইরান, মিয়ানমার, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, শ্রীলঙ্কা, উত্তর কোরিয়া ও তানজানিয়ার বিমানবাহিনীর বহরে এই যুদ্ধবিমান আছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় আড়াই হাজার এফ‑৭ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করেছে চীন। এই মডেলটি চেংদু জে‑৭ নামেও পরিচিত। ২০১৩ সালের পর এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

মিলিটারি এয়ারক্রাফট ডিরেক্টরির তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় প্রজন্মের এই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান সর্বপ্রথম বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয় হয় আশির দশকের শেষে। ১৯৮৯ সালে ১৪টি এফ‑৭ এমবি এবং ৪টি এফটি‑৭ এমবি বাংলাদেশকে সরবরাহ করে চীন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে এর উন্নত সংস্করণ ১২টি এফ‑৭ বিজি বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়। একই সময়ে এর আরেকটি সংস্করণ এফটি‑৭ মডেলের আরও ৪টি বিমানবাহিনীতে সংযুক্ত হয়।

এই উড়োজাহাজের সবশেষ ও আধুনিক সংস্করণ এফ‑৭ বিজিআই বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয় ২০১৩ সালের দিকে। এর মধ্যে ১৬টি ছিল এফ‑৭ বিজিআই আর ৪টি এফটি‑৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ।

দি ইকোনমিক টাইমস বলছে, বর্তমানে যুদ্ধবিমান হিসেবে মোট ৩৬টি এফ‑৭ বিজি ও এফ‑৭ বিজিআই উড়োজাহাজ বিমানবাহিনীতে সক্রিয়। এ ছাড়াও একই মডেলের ১১টি ব্যবহার হচ্ছে প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ হিসেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *