বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের ভোটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত একটি পদ্ধতি হলো পিআর (Proportional Representation) বা আনুপাতিক প্রতিনিধি পদ্ধতি। অনেক দেশের প্রচলিত “ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট” (FPTP) পদ্ধতির তুলনায় পিআর পদ্ধতিকে আরও ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক ধরা হয়। কিন্তু আসলে পিআর সিস্টেম কীভাবে কাজ করে এবং এর রহস্য কোথায়?
পিআর পদ্ধতি কী?
পিআর বা Proportional Representation হলো এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা যেখানে একটি রাজনৈতিক দলের ভোটের শতকরা হার অনুযায়ী সংসদ বা পরিষদে আসন বণ্টন করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কোনো নির্বাচনে একটি দল ৩০% ভোট পায়, তবে তারা সংসদের মোট আসনের প্রায় ৩০% পাবে। এর ফলে ছোট ও মাঝারি দলগুলোরও সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
প্রচলিত পদ্ধতির সঙ্গে পার্থক্য
আমাদের দেশে প্রচলিত পদ্ধতি হলো “ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট” (FPTP)। এখানে একটি আসনে সর্বাধিক ভোট পাওয়া প্রার্থী বিজয়ী হয়। অর্থাৎ, একজন প্রার্থী ৩৫% ভোট পেলেও, যদি বাকিরা তার চেয়ে কম ভোট পায়, তবে তিনিই আসনটি জিতে নেবেন। এতে অনেক সময় দেখা যায়, একটি দল মোট ভোটের অর্ধেকেরও কম পেয়ে সংসদে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
অন্যদিকে পিআর পদ্ধতিতে এই অসামঞ্জস্য থাকে না। ভোট গণনা করে প্রতিটি দলের মোট ভোটের হার অনুযায়ী আসন বণ্টন করা হয়। ফলে ভোটের প্রতিফলন সংসদের গঠনে সরাসরি প্রতিফলিত হয়।
পিআর পদ্ধতির সুবিধা
ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব: ছোট দল বা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর কণ্ঠ সংসদে প্রতিফলিত হয়।
জনগণের প্রকৃত মতামত প্রতিফলন: প্রতিটি ভোটের মূল্য থাকে সমান।
রাজনৈতিক বৈচিত্র্য: সংসদে বিভিন্ন মতাদর্শ ও নীতি আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়।
জোট রাজনীতির বিকাশ: কোনো একক দল সহজে একক ক্ষমতা পায় না, ফলে সমঝোতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সরকার গঠন হয়।
পিআর পদ্ধতির চ্যালেঞ্জ
পিআর পদ্ধতিতে প্রায়শই একক দলকে পর্যাপ্ত আসন না দেওয়ায় জোট সরকার গঠন করতে হয়, যা কখনও কখনও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
ভোট গণনা ও আসন বণ্টন তুলনামূলকভাবে জটিল।
অনেক সময় ক্ষুদ্র দলগুলোর অতিরিক্ত প্রভাব পড়তে পারে।
কোনটি উত্তম?
এক কথায় বলা কঠিন। FPTP পদ্ধতি যেখানে সহজ ও সরাসরি, পিআর পদ্ধতি সেখানে ন্যায্যতা ও প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে শক্তিশালী। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলো (যেমন জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন) পিআর পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দেয়।