‘তুমি জয়ী হওনি, গণনায় ভুল হয়েছে, দুঃখিত’

সারাদেশ

শহীদ রফিক-জব্বার হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন সম্পাদক পদে বিজয়ী হন আশরাফুল ইসলাম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ফল ঘোষণার কিছুক্ষণ পর হল প্রভোস্ট তাঁকে মোবাইল ফোনে জানান– ‘তুমি জয়ী হওনি, গণনায় ভুল হয়েছে, আমরা দুঃখিত।’

হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন সম্পাদক পদে চার প্রার্থী মিলে ভোট পান ৫০৯টি। অথচ হলটিতে মোট ভোট পড়েছে ৪৬৯টি। গত শনিবার ফল ঘোষণার পর থেকেই হল সংসদের ভোট গণনায় এ রকম নানা অসংগতি ধরা পড়ে।

শহীদ রফিক-জব্বার হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন সম্পাদক পদে ১৩২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন আশরাফুল ইসলাম। তাঁর নিকটতম তিন প্রতিদ্বন্দ্বী লুৎফর রহমান রিফাত (১২৯), মো. ইউসুফ (১২৫) ও মো. আবু সায়েম (১২৩)। চার প্রার্থীর ভোট দাঁড়ায় ৫০৯টি, যা হলের মোট গ্রহণের ভোটের চেয়ে ৪০টি বেশি। এ ব্যাপারে প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় আমি জয়ী হয়েছিলাম। পরে হল প্রভোস্ট মোবাইল ফোনে জানান গণনায় ভুল হয়েছে। আমি ৯২ ভোট পেয়েছি, জয়ী হতে পারিনি। এত সময় নিয়েও ফলাফলে ভুল হওয়া দুঃখজনক।’

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার জয় বলেন, ‘এখানে গণনায় ভুল হয়েছে। আমরা অনুতপ্ত। মূলত দুই টালিতে ভোট গণনা হয়েছে। সেখানে চার সংখ্যাকে ইংরেজির আট ভেবে গণনা করা হয়েছে। তাই এমন ভুল হয়েছে।’

জাহানার ইমাম হলের রিটার্নিং অফিসার তথ্য বলছে, হলে মোট ভোট পড়েছে ২৪২টি। তবে নির্বাচন কমিশনের ফলাফলে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোট দিয়েছেন ২৪৭ জন, অর্থাৎ পাঁচটি বেশি। এ হলের এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে লামিয়া জান্নাত ও সাদিয়া জান্নাত ১১৩ ভোট পান। নির্বাচন কমিশন থেকে দুজনকেই জয়ী ঘোষণা করে ছয় মাস করে এক বছরের দায়িত্ব নিতে বলা হয়। তবে ভোটের ‘টিক চিহ্ন’ নির্দিষ্ট ঘরের বাইরে চলে যাওয়ায় লামিয়া জান্নাতের একটি ভোট বাতিল করা হয়। কিন্তু অন্য হলের ক্ষেত্রে তা বাতিল করা হয়নি বলে জানা গেছে।

লামিয়া জান্নাত বলেন, ‘শুধু ‘টিক চিহ্ন’ একটু বক্সের বাইরে যাওয়ায় আমার ভোটটা বাতিল করা হয়। অথচ অন্য হলের ক্ষেত্রে এটি হয়নি। যেহেতু ভোট গণনা করা হয়েছে হাতে, তাই এই ভোটটা বাতিল করার কথা না। আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে।’

হলের রিটার্নিং অফিসার নাসরিন খাতুন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে গেলে ভোট বাতিল করা হবে। তাই ওই ভোটটি বাতিল করা হয়েছে।’

মওলানা ভাসানী হলের ভোট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদে কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচন করা নীহ্লা অং মারমা পেয়েছেন শূন্য ভোট, যা নিয়ে রেলং খুমি নামের এক ভোটার প্রশ্ন তোলেন। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার কাছের ছোট ভাই নীহ্লা অং মারমা জিততে পারেনি। মওলানা ভাসানী হল থেকে সে একটা ভোটও পায়নি। কিন্তু আমি তাকে ভোট দিয়েছি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রেলং খুমি বলেন, ‘ভাসানী হলে আমাদের আদিবাসী কমিউনিটির ভোট রয়েছে। নীহ্লা অং মারমার বন্ধুবান্ধবরাও রয়েছে, তার পরও সে শূন্য ভোট পেয়েছে দেখলাম। অথচ আমি তাকে ভোট দিয়েছি।’

সার্বিক বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভোট গণনায় ভুল হওয়ার বিষয়টি দেখবে দায়িত্বরত রিটার্নিং অফিসার। এটা আমাদের দায়িত্ব না, আমাদের কাছে যে ফলের শিট এসেছে, আমরা তাই ঘোষণা করেছি। এখন ফল নিয়ে যদি প্রশ্ন থাকে তা নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে জাকসুর সভাপতিকে (উপাচার্য)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *