জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন মো. ইয়াকুব। মা রহিমা আক্তার তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছি, ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
বুধবার (১৩ আগস্ট) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যে তিনি এ কথা বলেন।
জবানবন্দিতে সন্তানহারা রহিমা আক্তার বলেন, আমার ৩৫ বছরের ছেলে মো. ইয়াকুব নিউ মার্কেটে ডেলিভারিম্যানের কাজ করত। সে প্রায়ই ছাত্র আন্দোলনে যেত। গত বছর ৫ আগস্টও চানখাঁরপুল এলাকার আন্দোলনে গিয়েছিল। ওই দিন সে সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়। পেটের এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অপর পাশ দিয়ে ভুড়িসহ বের হয়ে যায়। প্রথমে আমাকে কিছু বলেনি। সবাই সান্ত্বনা দিচ্ছিল। আমি সবাইকে বললাম, ‘তোমরা কাঁদছ কেন? আমারে কাঁদতে দাও না কেন?’ একপর্যায়ে আমার ছেলের লাশ যখন খাটিয়ায় করে আনা হয়, তখন খাটিয়া বেয়ে অনেক রক্ত পড়ছিল।
এসময় ট্রাইব্যুনালের টিভি মনিটরে মো. ইয়াকুবের রক্তাক্ত অবস্থার ভিডিও দেখানো হলে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অশ্রুসিক্ত রহিমা সে সময় বলতে থাকেন, ‘আমি একটা মা, জিন্দা লাশ হয়ে বাঁচে আছি। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। হাসিনা, কাউয়া কাদেরসহ যারা গুলির অর্ডার দিয়েছে, আমি তাদের বিচার চাই।’
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এই শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটরসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
গত সোমবার এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটর সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পর শহিদ আনাসের বাবা সাক্ষ্য দেন।
এরপর মঙ্গলবার সাক্ষ্য দেন রাজধানীর বোরহান উদ্দিন কলেজের শিক্ষিকা আঞ্জু আরা ইয়াসমিন এবং চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে শহিদ সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের বাবা শেখ জামাল হাসান।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন।
মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
এদের মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক। গ্রেপ্তার চারজনকে বুধবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার এবং সরকারের অনুগত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ছে। এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।