জামানত ছাড়াই ৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন ছোট উদ্যোক্তারা

অর্থনীতি

ব্যাংকগুলো কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতে আগামী পাঁচ বছর কী পরিমাণ ঋণ দেবে তার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ছোট উদ্যোক্তারা কোনো ধরনের জামানত ছাড়াই পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। ব্যবসা সংক্রান্ত সনদ দিয়েই মিলবে এই ঋণ। আগামী ২০২৯ সালের মধ্যে ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতির ২৭ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে দিতে হবে। যার মধ্যে পনেরো শতাংশ পাবেন নারী উদ্যোক্তারা।

সোমবার (১৭ মার্চ) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগামস ডিপার্টমেন্ট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আমির উদ্দিন, সিএমএসএমই বিভাগের পরিচালক নওশাদ মুস্তফা, সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একই দিন এ বিষয়ে মাস্টার সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নতুন সার্কুলারে ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা’ নামের একটি নতুন শ্রেণি যুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে বাংলাদেশে এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তাদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।

কারা অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন, নীতিমালায় তাও পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় শিল্পনীতি–২০২২–এর আলোকে ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প খাতের উদ্যোক্তা’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা–২০২১ অনুযায়ী এই উদ্যোক্তাদের সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে। ইউনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন (ইউবিআইডি), ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিফিকেশন (ডিবিআইডি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে পার্সোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট (পিআরএ) আছে, এমন শ্রমনির্ভর অতিক্ষুদ্র বা ভাসমান উদ্যোক্তা বা সেবাপ্রদানকারীরা ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক বা প্রান্তিক উদ্যোক্তা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসা এই তিন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তারা, যাদের জনবল পারিবারিক সদস্যসহ ১০ জনের বেশি নয়, তারা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। নতুন নির্দেশনায় এই শ্রেণির উদ্যোক্তাদের টার্নওভারের শর্ত রাখা হয়নি। তবে তাদের জমি ও কারখানা ভবন ব্যতীত প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পদের মূল্য পাঁচ লাখ টাকার কম হতে হবে।

সিএমএসএমই খাতের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, মাঝারি শিল্প–উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। ১২১ থেকে ৩০০ কর্মী আছেন, এমন তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান অথবা এক হাজার কর্মী আছেন, এমন শ্রমঘন শিল্পে এই ঋণ দেওয়া হবে। এছাড়া মাঝারি শিল্পের মধ্যে সেবা খাতে সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে, যেখানে কর্মীর সংখ্যা ৫১ থেকে ১২০।

উৎপাদন খাতের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মাইক্রো শিল্পে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা ও ক্ষুদ্র শিল্পে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। মাঝারি শিল্পের ট্রেডিং খাতে ১০ কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র শিল্পের ট্রেডিং ও সেবা খাতে সর্বোচ্চ আট কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। অন্যদিকে মাইক্রো শিল্পের ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। কুটিরশিল্পে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে।

এর আগে ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পাঁচ বছরের জন্য সিএমএসএমই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। সেই নীতিমালার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন এই নীতিমালা করা হয়েছে।

নতুন নীতিমালায়, সিএমএসএমই মেয়াদি ঋণের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়েছে। পাঁচ বছরের বেশি প্রকল্পে ব্যাংক- গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ৬ থেকে ১২ মাস দিতে বলা হয়েছে।

নতুন নির্দেশনায়, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ আবেদনের সিআইবি চার্জ মুক্ত রাখা হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক জামানত বিহীন ঋণ এর বিপরীতে পুনঃঅর্থায়নের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *