কাঠগড়ায় মা-বোন ও স্ত্রীকে দেখে কাঁদলেন তৌহিদ আফ্রিদি; ‘যেতে চান না সিআইডির কাছে

সারাদেশ

বিচারক এজলাস থেকে চলে যাওয়ার পর তৌহিদ আফ্রিদির মা-বোন, স্ত্রী ও স্বজনেরা তার সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে তৌহিদ আফ্রিদিকে কাঁদতে দেখা যায়। সঙ্গে তার মা, বোন ও স্ত্রীও কাঁদতে থাকেন।

জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকায় আসাদুল হক বাবু নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আজ শনিবার আদালতে শুনানির জন্য কাঠগড়ায় তোলার পর তৌহিদ আফ্রিদি এজলাসে তার মা আসফিয়া উদ্দিন পিয়া, বোন নিশাত তাসনিম প্রোমি ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রিসাকে এজলাসে দেখে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন।

শনিবার (৩০ আগস্ট) পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তৌহিদ আফ্রিদিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান।

এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তৌহিদ আফ্রিদিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ৩টার দিকে তাকে এজলাসে তোলা হয়। এ সময় তৌহিদ আফ্রিদির মুখে কালো মাস্ক, মাথায় হেলমেট, হাতে হাতকড়া, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল।

আদালতে তৌহিদ আফ্রিদির পক্ষে তার আইনজীবী মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম জামিন চেয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। মামলার বাদী গত বছরের ১১ নভেম্বর এফিডেভিট দিয়ে আদালতকে বলেছেন, তথ্যগত ভুলের কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে। জামিন, অব্যাহতি ও খালাস পেলে তার আপত্তি নেই। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আসামির কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে। আসামির স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আসামির জামিনের প্রার্থনা করছি।’

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘এটা একটা হত্যা মামলা। মামলার তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে হাজতে আটক রাখার আবেদন জানাচ্ছি।’

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তৌহিদ আফ্রিদিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন তৌহিদ আফ্রিদি। কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বিচারককে সালাম দিয়ে বলেন, ‘আমার বয়স ২৫ বছর। চার মাস আগে কিডনিতে অপারেশন করানো হয়। ইনসুলিন নেওয়া লাগে। আমার স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

এ সময় তৌহিদ আফ্রিদিকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, ‘আপনার যাবতীয় চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হবে।’

তৌহিদ আফ্রিদির পক্ষে তার আইনজীবী মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আসামির মা-বোন ও স্ত্রী আদালতে এসেছেন। পরিবার থেকে তৌহিদ আফ্রিদির জন্য খাবারও আনা হয়েছে।’ তাদের সঙ্গে একটু কথা বলার অনুমতি চাইলে বিচারক ১৫ মিনিট সময় দেন।

এরপর বিচারক এজলাস থেকে চলে যাওয়ার পর তৌহিদ আফ্রিদির মা-বোন, স্ত্রী ও স্বজনেরা কাঠগড়ার দিকে এগিয়ে যান। এরপর তারা বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। কথা বলার একপর্যায়ে তৌহিদ আফ্রিদিকে কাঁদতে দেখা যায়। সঙ্গে তার মা, বোন ও স্ত্রীও কাঁদতে থাকেন। কাঁদতে কাঁদতে তৌহিদ আফ্রিদির মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।

তৌহিদ আফ্রিদির এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তৌহিদ আফ্রিদি সিআইডির কাছে যেতে চাচ্ছে না। সে যেন ভয় পাচ্ছে। অনেক মেন্টাল ট্রমার মধ্যে আছে। গত পাঁচ দিন ধরে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। শারীরিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বার বার সিআইডির কথা বলছে। সে যেন বার বার ভয়ের কথা বলতে চাচ্ছে। আঙ্কেল নাসির উদ্দিন সাথীর চেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছে সে।’

গত ২৪ আগস্ট রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করেন সিআইডি পুলিশ। পরদিন তার পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হন তিনি। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় নাসির উদ্দিন ২২ নম্বর ও তৌহিদ আফ্রিদি ১১ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।

একই মামলায় গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থানাধীন এলাকা থেকে নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ১৮ আগস্ট তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২৩ আগস্ট তাকে কারাগারে পাঠানো হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *