ওবামার ভবিষ্যত বাণীই কি সত্য হবার পথে

আন্তর্জাতিক

২০২৩ সালের এক ঝলমলে সন্ধ্যা। হোয়াইট হাউসের রাজকীয় আয়োজনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অতিথি হয়ে এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। করতালির মাঝ দিয়ে তার প্রবেশ, মুখে চিরচেনা হাসি, পাশে বাইডেনের উজ্জ্বল অভ্যর্থনা—সব মিলিয়ে যেন কূটনৈতিক সৌহার্দ্যের নিখুঁত প্রদর্শনী।

কিন্তু এই বাহ্যিক হাসি ও আলোকোজ্জ্বল চিত্রের আড়ালে জমে উঠছিল এক নতুন নাটক। ঠিক সেদিনই হাজার মাইল দূরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক সাক্ষাৎকারে বললেন এমন এক কথা, যা শুধু কূটনৈতিক মহল নয়, গোটা বিশ্বের মিডিয়াকে নাড়িয়ে দিল। তার কণ্ঠ ছিল শান্ত, কিন্তু উচ্চারণ ছিল বিস্ফোরণের মতো: “ভারতে যদি মুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত না করা হয়, তবে একদিন দেশটি টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।”

এই এক বাক্যে যেন থমকে গেল উপমহাদেশের রাজনীতি। ওবামা কেবল একজন বিশিষ্ট নেতা নন, তিনি মোদিকে ব্যক্তিগতভাবে জানেন, মুখোমুখি হয়েছেন একাধিকবার। তাই তার এ মন্তব্য নিছক রাজনৈতিক বক্তব্য নয়—এ যেন ভবিষ্যতের ভয়ঙ্কর একটি সতর্ক বার্তা।

তিনি আরও বলেন, “আমি যদি মোদির সামনে বসতাম, তাকে সোজা বলতাম—সংখ্যালঘুদের অধিকারকে সম্মান করুন, নইলে ভারতের ঐক্য ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

যখন বাইডেন-মোদি হোয়াইট হাউসে হাসিমুখে ছবি তুলছেন, তখনো মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি ওবামার সেই সাক্ষাৎকার। বাইডেন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, “আমাদের ডিএনএ-তে গণতন্ত্র রয়েছে”, আর মোদিও বলছিলেন, “ভারত বৈষম্যবিহীন দেশ, যেখানে সংবিধান সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষা করে।”

কিন্তু এই হাসির আড়ালেও চাপা ছিল এক বাস্তবতা। কারণ একই দিনে বাইডেন পেয়েছেন ৭৫ জন মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি, যেখানে মোদির সঙ্গে বৈঠকে মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে তোলার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মোদি অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড়। তার ভাষায়, “ভারতে কোনও বৈষম্য নেই। আমাদের গণতন্ত্র সফলভাবে কাজ করছে।”

এই বক্তব্য যে পূর্বনির্ধারিত ছিল তা বোঝা যায় সংবাদ সম্মেলনের ‘নির্বাচিত’ প্রশ্ন থেকে—যেখানে প্রশ্নের ধরনও আগেই ঠিক ছিল। তবু মোদি ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু বাইরে তখন গর্জে উঠেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া—CNN, BBC, নিউইয়র্ক টাইমস, NDTV-তে একটাই শিরোনাম: “India risks breaking apart if minority rights not protected – Obama warns.”

ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, মুসলিম ও দলিতদের বিরুদ্ধে সহিংসতা—এসব নতুন কিছু নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বছরের পর বছর ধরে এগুলোর প্রতিবেদন দিয়ে আসছে। তবে ওবামার মতো উচ্চ পর্যায়ের একজন সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের মুখে এমন স্পষ্ট হুঁশিয়ারি—এই প্রথম।

এ বক্তব্য দুই দেশের বন্ধুত্বকেও এক কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়: “যুক্তরাষ্ট্র কি কেবল কৌশলগত স্বার্থের জন্য ভারত সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উপেক্ষা করবে?”

ভারতের ভেতরেও এই মন্তব্য ঘূর্ণিঝড় তুলেছে। বিজেপি-ঘনিষ্ঠরা একে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ বলে নিন্দা জানালেও, বিরোধীরা বলছে, “অবশেষে আমাদের আওয়াজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।”

হোয়াইট হাউসের প্রাসাদে আলো নিভে গেলেও, জ্বলে উঠেছে সংবাদমাধ্যমের স্ক্রিনগুলো। মোদির সফর হয়তো কাগজে-কলমে সফল বলা যায়, কিন্তু ওবামার এক বাক্য যেন অন্ধকারে ছুড়ে দেওয়া এক জ্বলন্ত সতর্কবার্তা।

আর আজ ২০২৫ সালেও, ভারত সেই একই বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে—ভেতরে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, বাইরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংঘর্ষ।

তাহলে কি ওবামার ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হতে চলেছে? ভারত কি টুকরো টুকরো হওয়ার পথে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *