ইরানের শিয়ারা কি মুসলমান নয়, যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

সারাদেশ

শিয়া শব্দের অর্থ বুঝলে তাদের মূল পরিচয় অনেকটাই স্পষ্ট হয়। ‘শিয়া’ শব্দটি এসেছে ‘শিয়াতু আলী’ থেকে, অর্থাৎ ‘আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর অনুসারীরা’। সাধারণভাবে এদের সেইসব মানুষ হিসেবে ধরা হয়, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিবারের প্রতি অতিরিক্ত অনুরাগ এবং কিছু বিশেষ বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে একটি ভিন্ন মতবাদের অনুসারী হয়ে উঠেছেন।

শিয়াদের উৎপত্তি সাহাবায়ে কেরামের যুগেই হলেও, ইতিহাসবিদদের মতে এর মূল ভিত্তি গড়ে দেন এক ইহুদি ব্যক্তি — আবদুল্লাহ ইবনে সাবা। তিনি মুসলিম সেজে ইসলামের ভিতরে বিভাজন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এক নতুন মতবাদের বীজ বপন করেন। সেই থেকেই শিয়ারা একে একে নানা বিভ্রান্ত বিশ্বাস ও আচরণে জড়িয়ে পড়ে।

শিয়াদের কিছু প্রচলিত বিশ্বাস ইসলামের মৌলিক আকিদার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শায়খ আহমাদুল্লাহ যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন তা নিম্নরূপ—

১. তাওহীদের বিকৃতি: শিয়ারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”-কে যথেষ্ট মনে করে না। তারা বলে, “আলীউন ওয়ালিয়ুল্লাহ” বলাও ঈমানের অংশ এবং মুখে উচ্চারণ করাও আবশ্যক।

২. কোরআন সম্পর্কে সন্দেহ: শিয়াদের অনেক উপদল মনে করে, বর্তমানে প্রচলিত কোরআন সম্পূর্ণ নয় বা এতে বিকৃতি ঘটেছে। কেউ কেউ নিজেরা বিকৃত কোরআন প্রচারও করে থাকে।

৩. সাহাবিদের গালি দেওয়া ও কাফের বলা: শিয়ারা রাসূলের অধিকাংশ সাহাবিকে (আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন ছাড়া) কাফের মনে করে এবং তাঁদের গালি দেওয়া ইবাদত মনে করে।

৪. উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ)-এর চরিত্র নিয়ে সন্দেহ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার চরিত্র নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলে, যদিও কোরআনের সূরা নূরে আল্লাহ তাঁর নির্দোষিতার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিয়াদের অন্যতম প্রভাবশালী উপদল হলো ইসনা আশারিয়া বা বারো ইমামবাদী শিয়া। এরা বিশ্বাস করে রাসূলের পরে ১২ জন ইমাম আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হয়েছেন, যাঁরা নিষ্পাপ এবং ইবাদতের প্রয়োজন নেই। তারা মনে করে, শেষ ইমাম (মুহাম্মদ ইবনে হাসান আল আসকারি) গায়েব হয়ে আছেন, একদিন ফিরে আসবেন।

তাহলে শিয়ারা কি মুসলমান নয়?

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, শিয়াদের মধ্যে অনেক উপদল রয়েছে। কেউ কেউ এমন মতবাদে বিশ্বাস করে যা ইসলামের গণ্ডি থেকেই তাদের বের করে দেয়। যেমন— কোরআনের বিকৃতি, সাহাবিদের গালি দেওয়া, আয়েশার চরিত্রে সন্দেহ, এমনকি কেউ কেউ বলে জিবরাঈল (আ.) ভুল করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ওহি এনেছেন— মূলত তা আনা উচিত ছিল আলী (রাঃ)-এর কাছে। এ ধরণের বিশ্বাস যারা রাখে, তাদের মুসলিম বলা যায় না।

তবে শিয়াদের মধ্যে এমন কিছু উপদলও আছে যাদের অনেক ভুল ও ভ্রান্তি থাকলেও, সরাসরি কাফের বলার সুযোগ নেই। যেমন— যারা শুধু মনে করে যে খেলাফতের ক্ষেত্রে আলী (রাঃ) বেশি হকদার ছিলেন। এটা একটি মতভেদ হলেও তা সরাসরি কুফরি নয়।

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সঠিক আকিদা বোঝা এবং ইসলাম ও কুফরের পার্থক্য নির্ভুলভাবে জানা। শিয়াদের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত অবস্থান নেওয়ার আগে তাদের বিশ্বাস-বিচার বিশ্লেষণ করে বোঝা দরকার, তারা আদৌ মুসলিম কিনা। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস যারা অস্বীকার করে, তাদের ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন অবস্থান নেওয়া জরুরি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হক বুঝার এবং সে অনুযায়ী অবস্থান গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *