আরব বিশ্ব ও তুরস্কের এটাই শেষ সুযোগ!

আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের কিনারায় দাঁড়িয়ে। গত ১২ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, শাসকগোষ্ঠী এবং জ্বালানি স্থাপনায় ধারাবাহিক বিমান হামলা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘ধ্বংস ও নির্মূল’ করাই এই অভিযানের লক্ষ্য। জবাবে ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা থেকে সরে এসেছে।

এরই মধ্যে যুদ্ধ শুধু ইসরায়েল ও ইরান সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পুরো অঞ্চলকেই গ্রাস করবে এ নিয়ে আরব দেশগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর আকাশ দিয়ে নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র চলাচল দেখা যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ‘যুদ্ধ আমাদের কাছে কবে আসবে’।

এখনো যুদ্ধ থামানোর সুযোগ আছে

যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র এখন কূটনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, সেহেতু আঞ্চলিক দেশগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তুরস্ক এবং আরব দেশগুলোরই ইসরায়েল, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই কার্যকর সম্পর্ক আছে। তাই এই দেশগুলোকে এখনই মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে হবে।

তাদের উচিত একটি আঞ্চলিক কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করা। যেখানে ইসরায়েল ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ সংলাপের ব্যবস্থা হবে (বিশেষ করে বেসামরিক অঞ্চলে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে)। একই সঙ্গে একটি আলাদা সংলাপচ্যানেল তৈরি করা দরকার। এর মাধ্যমে মাধ্যমে জ্বালানি ও সামুদ্রিক অবকাঠামো রক্ষা, পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সম্ভাব্য পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

আতঙ্কে উপসাগরীয় দেশগুলো

২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় ইরানের হামলা এবং ইয়েমেনে হুতিদের মাধ্যমে অঞ্চলজুড়ে হুমকি তৈরি করার মতো ঘটনা আরব দেশগুলোকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে ইরানের কর্মকাণ্ড তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অপরদিকে, ইসরায়েলের গাজায় অভিযান, বসতিস্থাপন সম্প্রসারণ এবং ফিলিস্তিনি প্রশ্নে কঠোর অবস্থানও আরব জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করেছে। এতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিয়েছে।

সবচেয়ে বড় উদ্বেগ এখন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের বিস্তার

ইসরায়েলের ইরানি জ্বালানি স্থাপনায় হামলা ইরানকে উপসাগরীয় স্থাপনায় পাল্টা হামলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে আরব দেশগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। এদিকে ইসরায়েল চায় যুক্তরাষ্ট্রও হয়তো অংশ নেবে। তখন আরব দেশগুলো মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে ইরানের টার্গেটে পরিণত হবে।

এখনই সময় মধ্যস্থতায় নেতৃত্ব নেওয়ার

আরব দেশগুলো এরইমধ্যে ইসরায়েলের হামলা নিন্দা করেছে। সৌদি আরব ও আমিরাত স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে। কাতার ও ওমান কঠিন ভাষায় বিরোধিতা জানিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, ‘সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আমরা যা কিছু করতে পারি, করব।’

এই মুহূর্তে উপসাগরীয় দেশগুলো এবং তুরস্কেরই বাস্তব কূটনৈতিক প্রভাব আছে

তাদের যোগাযোগ আছে ওয়াশিংটনের সঙ্গে। তেহরানের সঙ্গেও কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এখন ইসরায়েলের সঙ্গেও যোগাযোগের পথ খোলা আছে। যদি তারা যুদ্ধ থামাতে উদ্যোগ না নেয়, তবে ইরান তাদের অবকাঠামোয় হামলা করতে পারে। ইয়েমেনে হুতিরা আবারও মৃত সাগরে হামলা চালাতে পারে। এছাড়া জনসাধারণ খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে পড়বে।

ইসরায়েল, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র—তিন পক্ষকেই বোঝাতে হবে

এই কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলকে বোঝাতে পারে, তাদের বর্তমান কৌশল স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলবে। ইরানকেও বলতে হবে, তার পরমাণু কর্মসূচি ও আঞ্চলিক আচরণ পরিবর্তন ছাড়া অঞ্চলে কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পথ এখনো আছে

যুদ্ধ এড়ানো কঠিন হবে। কারণ ইসরায়েল ও ইরান দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়। তবুও, বিশ্ব এখন একটিই জিনিস চায়: শান্তির জন্য একটি জোরালো, ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রয়াস। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা লাগবে, কিন্তু নেতৃত্ব হতে হবে আঞ্চলিক দেশগুলোর (বিশেষ করে আরব বিশ্ব ও তুরস্কের)। এটাই তাদের শেষ সুযোগ।

সূত্র: ফরেন অ্যাফের্য়াস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *