আমি জড়িত না ফাঁইসা গেছি, কে কাকে হত্যা করেছে আমি জানি না

সারাদেশ

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন। আজ শনিবার (১২ জুলাই) আদালত থেকে কারাগারে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই তরুণ বলেন, তিনি ফেঁসে গেছেন।

গত বুধবার (৯ জুলাই) নৃসংশ এই হত্যাকাণ্ডের পর গত বৃহস্পতিবার রবিনকে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশ। পরদিন শুক্রবার অস্ত্র আইনের মামলায় তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ। কিন্তু বৃহস্পতিবারই নিহতের বড় বোন মঞ্জুরা বেগমের করা এজাহারে তাঁর নাম থাকায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে তাঁকে আজ আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কারাগারে নেওয়ার পথে তারেক রহমান রবিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ফাঁইসা গেছি। কার সঙ্গে কী বিরোধে কে কাকে হত্যা করেছে এটা আমি জানি না। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু সারা দেশের মানুষ তো জেনে গেল আমি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত।’

বিপন্নকণ্ঠে রবিন বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে আমার বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল… সব শেষ হয়ে গেল! আমার মা ও গুরুতর অসুস্থ। জানি না ভবিষ্যতে কী হবে!’

এর আগে রবিনকে আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, রবিন অস্ত্র আইনের মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি। তাঁর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। আদালত অস্ত্র মামলায় ১৬৪ ধারায় রবিনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন বলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে কোতোয়ালি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই তানভীর নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রমতে, রবিন খাস কামরায় বিচারককে বলেন, গ্রেপ্তারের সময় তাঁর হাতে একে-৪৭ রাইফেল ছিল, সেটি তিনিই ব্যবহার করতেন।

গত বুধবার বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি ও পুরনো তারের ব্যবসায়ী যুবদলের কর্মী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

কিন্তু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার আগেই হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিহতের বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় রবিনকে আসামি করা হয়। রবিন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এই মামলায় গ্রেপ্তার বেশ কয়েকজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল তিন আসামিকে এজাহার থেকে বাদ দিয়ে যারা জড়িত নয়, তাঁদের আসামি করা হয়েছে বলে এরই মধ্যে অভিযোগ করেছে যুবদলসহ বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন।

যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা জানতে চাই, কারা কেন এই তিন আসামিকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্য জনকে আসামি করল। আর ঘটনাটি বুধবারের (৯ জুলাই)। গতকাল শুক্রবার এই ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। দুই দিন আগের ঘটনা কেন দুই দিন পর প্রচার হলো, এর পেছনে কারা জড়িত সেটাও খুঁজে দেখা উচিত।’

এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় পুলিশ ও র‍্যাব পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে গতকাল শুক্রবার এই মামলায় গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান মহিনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মহীনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত রবিন। আর গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া টিটন গাজীকে আজ আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন—মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, টিটন গাজী, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

তাঁদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, মনির ওরফে লম্বা মনির, আলমগীর এবং টিটন গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *