আবু সাঈদকে গুলির দৃশ্য ফটো ফরেনসিক করে যা জানা যায়

সারাদেশ

“দেশের মালিক জনগণ, কাজেই জনগণের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। সরকার যা চাইবে, তা-ই হবে—এমন নয়।” এই ভাষ্য লিখেছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। সাধারণ নয়, সাহসীও বটে। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লিখেছিলেন—“জবাব চাই! শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা কেন? রক্তচক্ষুর ভয় দেখিয়ে সত্যকে দমন করা যাবে না। বাঁচবো বাঁচার মতো, অন্তত একজন শামসুজ্জোহা হয়ে মরাটাই গর্বের।”

এই সাহসী শব্দগুলোর লেখক ছিলেন রংপুরের বেগম রোকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ। ২৪ সালের ১৬ জুলাই তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শহীদ হিসেবে তিনি আজ ইতিহাসে এক অমলিন নাম।

সে দিনও ছিল অন্য অনেক দিনের মতোই—ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা। সেখানেই সামনে থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আবু সাঈদ। কোনো লাঠি ছিল না, ছিল না অস্ত্র। ছিল শুধু প্রতিবাদের দৃঢ়তা।

বাংলাদেশ দ্রিক পিকচারস লাইব্রেরি ও যুক্তরাজ্যের ফরেনসিক আর্কিটেকচারের ফটো ফরেনসিক বিশ্লেষণ বলছে, বিনা সতর্কবার্তায় পুলিশের বন্দুক থেকে তিনবার গুলি ছোড়া হয় তার ওপর। দুটি বন্দুক থেকে ছোঁড়া গুলির ম্যাগাজিনও পাওয়া যায় তার দেহের পাশে। ওই সময় আবু সাঈদ ছিলেন সম্পূর্ণ নিরস্ত্র, দুই হাত উপরে তুলে দাঁড়িয়ে।

সহপাঠীরা জানান, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির দিনগুলোতে একাধিকবার তিনি বাধার মুখে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পমেন বড়ুয়ার হাতে মারধর ও গলা চেপে ধরার পরও আবু সাঈদ পিছিয়ে যাননি। বরং বলেছিলেন—“আমি আন্দোলন করব। যৌক্তিক দাবির জন্য করব।”

১ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিনই তিনি আন্দোলনে অংশ নেন, কর্মসূচি পরিচালনা করেন, নতুন নতুন ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর বক্তৃতা, মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাস অনেককেই অনুপ্রাণিত করেছিল।

আবু সাঈদের মৃত্যুর পর যেন স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। রাজপথে লাখো শিক্ষার্থীর স্লোগানে কেঁপে ওঠে নগর, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, এমনকি সরকারি দপ্তরগুলোও। চাপের মুখে সরকারকে কোটা সংস্কারে বাধ্য হতে হয়। ১৫ বছরের বৈষম্যমূলক নীতির অবসান ঘটে।আবু সাঈদ হত্যার মামলায় ৩০ জন আসামির মধ্যে এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ৬ জন। বাকি ২৪ জন পলাতক। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। স্বজনেরা বিচার দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

পীরগঞ্জের সেই সাধারণ ছাত্রটি এখন শুধু একজন শহীদ নয়, তারুণ্যের প্রতিবাদের প্রতীক। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এক আন্দোলনের বিজয় সূচিত হয়েছিল।

তাঁর স্বপ্ন, তাঁর কথা, তাঁর বুক চিতানো সাহস—সবকিছু আজকের তরুণদের জন্য একটি আলোকবর্তিকা।

“তোমরা আমার সাথে একটু এগিয়ে এসো, আমরা এই আন্দোলন সফল করব ইনশাআল্লাহ।” এই ছিল আবু সাঈদের ডাকে শেষ উচ্চারণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *