চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ‘শেফালী বেগম মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসায়’ দুই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার মাঝরাতে তাদের বমি শুরু হয়। শিক্ষকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত দুই ছাত্রী হলো– উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লেবুডাঙ্গা গ্রামের তরিকুল ইসলামের মেয়ে তানিয়া আক্তার নিশি (১২) ও বেগপুর গ্রামের সৈবুর রহমানের মেয়ে জামিলা খাতুন (১০)।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আবদুল আলিম বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই জামিলা খাতুনের মৃত্যু হয়। আর তানিয়া আক্তার চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। একজনের মুখে ফেনা ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।’ অবশ্য তানিয়ার পরিবার সাপে কেটে মৃত্যু দাবি করেছে।
একতলা টিনশেডের মাদ্রাসাটি রাধানগর ইউনিয়নের ডোবার মোড়ে। আশপাশে কোনো বাড়িঘর নেই। পাশেই আমের বাগান রয়েছে।
মৃতের পরিবার, পুলিশ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, শুক্রবার রাতের খাবার শেষে ১৩ ছাত্রী ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ১টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে তানিয়া ও জামিলা। দুজনই বমি করতে থাকে। পরিবারকে খবর দেওয়ার পাশাপাশি মাদ্রাসার শিক্ষক শাহিদা খাতুন তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত সাড়ে ৩টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ মরদেহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
শাহিদা খাতুন জানান, তাদের এখানে বাসি-পচা খাবার দেওয়া হয় না। প্রতিদিন বাজার করে খাবার প্রস্তুত করা হয়। শুক্রবার রাতে ১৩ ছাত্রী খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে প্রথমে জামিলা বমি শুরু করে, সঙ্গে রক্ত যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর তানিয়ার বমি শুরু হয়। তিনি আরও জানান, ১৩ ছাত্রী এক জায়গায় ঘুমিয়েছিল। কিন্তু মৃত দুজন পাশাপাশি ছিল না। তানিয়ার একটি হাত ফোলা ও ডান পায়ের গোড়ালিতে চার-পাঁচটি দাগ রয়েছে। এগুলো কোনো কাটা দাগ নয়, চুলকানোর কারণে হয়েছে।
মাদ্রাসার পরিচালক আশরাফ আলী জানান, তিন ছাত্রী ছুটিতে। বাকি ১৩ জনকে রাতে ভাতের সঙ্গে গোল আলু, পুঁইশাক ও ডালের মিশ্রণে সবজি দেওয়া হয়। রাতে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। সাপে কেটে তাদের মৃত্যু হয়েছে; দংশনের স্পষ্ট দাগ রয়েছে।
গোমস্তাপুর থানার ওসি ওয়াদুদ আলম জানান, সুরতহাল প্রতিবেদনে দুই ছাত্রীর শরীরে কোনো কাটাছেঁড়ার দাগ পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব, শীর্ষে যে দলের
এদিকে, গতকাল শনিবার লেবুডাঙ্গা ও বেগপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনরা মাতম করছেন। দুটি গ্রামেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা এসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
মেজো মেয়ে জামিলার শোকে মা খাদিজা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বামী ঢাকা থাকেন। তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ বছর।
খাদিজা বেগম বলেন, ‘আল্লাহ মেজো সন্তান দেওয়ার পর তাকে মাদ্রাসায় দিয়েছিলাম। সেখানেই আল্লাহ তার মৃত্যু লিখে রেখেছে। কারও ওপর আমার ক্ষোভ নেই, মামলাও করব না।’
অন্যদিকে তানিয়ার চাচা মশিউর রহমান বলেন, ‘ভাতিজির ডান পায়ের গোড়ালির নিচে দাগ পেয়েছি। এটি সাপে কাটার দাগ। জানাজা শেষে সন্ধ্যায় তানিয়াকে দাফন করা হয়েছে।’