আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে ফেরাচ্ছে কারা?

সারাদেশ

দেশের রাজনীতি আবারও চরম উত্তেজনার মুখে। ঈদের ঠিক আগে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। তবে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ পরে জানাবে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে, নির্ধারিত সময়েই প্রকাশ পাবে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী রোডম্যাপ।

এই ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। একদিকে অনেকে এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও, অন্যদিকে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল হতাশা প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, নির্বাচন জানুয়ারিতেই সম্ভব ছিল, তাই পেছানোটা অপ্রত্যাশিত।

এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগও চুপ করে বসে নেই। আনন্দবাজার.কম-কে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, “নির্বাচন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন এবং শেখ হাসিনার দেশে ফেরাকে ঘিরেই এখন আমাদের কৌশল সাজানো হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “এই ঘোষণার ভেতরে এক ধরনের দ্ব্যর্থতা আছে। মনে হচ্ছে, যেন নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তের আড়ালেও ‘নির্বাচন না করার’ বার্তা লুকিয়ে আছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। আমাদের ৪৫ শতাংশেরও বেশি সমর্থন রয়েছে — এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা একরকম অসম্ভব।”

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দলকে আরও শক্তিশালী করা। আমাদের আদর্শ ও অস্তিত্ব হুমকির মুখে, তাই দলকে নতুন করে সংগঠিত করছি। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী।”

তবে কাদের স্পষ্ট করে দেন, ড. ইউনুস ও জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক তৎপরতার মধ্যে তিনি ‘অদ্ভুত মিল’ খুঁজে পান। তার ভাষায়, “ড. ইউনুসের পেছনে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর শক্তি কাজ করছে। ওরাই তাকে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই গোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করলে দেশ অন্ধকারে ডুবে যাবে।”

সাক্ষাৎকারে উঠে আসে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার প্রসঙ্গও। ওবায়দুল কাদের বলেন, “তিনি নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, অনুপ্রাণিত করছেন। আমি আজ বিকেলেও তার সঙ্গে কথা বলব। আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ আছেন।” তবে শেখ হাসিনার ফেরা কবে হবে— সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, দেশের প্রয়োজনেই তিনি ফিরবেন। যারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, তারা ছাড় পাবে না। তবে তার ফেরা এখন অনেক কিছুর উপর নির্ভর করছে— দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জনগণের মনোভাব ও আন্তর্জাতিক সমীকরণের উপর।”

এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেই প্রশ্ন ঘুরছে সাধারণ মানুষের মনে— এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষ কোথায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *