নিউজ ডেষ্ক- সাত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে ‘মূল্যস্ফীতি: সরকারি পরিসংখ্যান বনাম প্রান্তিক মানুষের বাস্তবতা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ কথা জানায় সানেম। এসময় মূল্যস্ফীতির চিত্র তুলে ধরা হয়।
সানেম বলছে, সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস ফেব্রুয়ারিতে দেশে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির যে হারের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছিলো তা বাস্তবসম্মত নয়। প্রকৃত হার তার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নয়, নিম্ন-মধ্যবিত্ত অনেক চাপে আছে। টিসিবির ট্রাকে মানুষের লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। সে সময় যখন বিবিএস জানিয়েছে মূল্যস্ফীতি উদ্বেগজনক নয়, তখন বিবিএসের তথ্য আমাদের ভাবায়।
তিনি বলেন, বিবিএস পুরনো ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, শহরে এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখন ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গ্রামে এই হার ১২ দশমিক ১০ শতাংশ। যদিও ১৬ ফেব্রুয়ারি বিবিএস যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গ্রামে এই হার ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, শহরে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বিবিএস বলছে, ২০২১ এর ডিসেম্বরে এই হার ছিল ৬ শতাংশের ওপরে; ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছিলো ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
সেলিম রায়হান বলেন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ খুবই চাপে আছে। ভাত না খেয়ে অন্য কিছু খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছে অনেক মানুষ। যারা কোভিডকালীন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন তারা আবার সংকটে পড়ছেন।
পণ্যমূল্য বাড়ার ক্ষেত্রে মোট সাতটি কারণ উল্লেখ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
এগুলো হলো- চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি, সরবরাহে ঘাটতি, পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার না থাকা এবং দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা, আমদানি মূল্য, পরিবহন খরচ ও বিদেশি মুদ্রার বিনিময়হারের ঊর্ধ্বগতি, বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি।
সেলিম রায়হান বলেন, বিবিএস খাদ্যের চাহিদা ও যোগানের সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারছে না। এ কারণে সংকট হচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছে কি না, সেটা দেখা উচিত। ব্যবসায়ীদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। কারণ তারাও দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
সানেমের প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরের পোশাক শ্রমিকদের একই পণ্য কিনতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এই শ্রমিকরা যত ব্যয় করে, তার ৬০ দশমিক ৫২ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে খাদ্য কিনতে।
এছাড়া দিন এনে দিন খায়- এমন শ্রমিকদের আয়ের ৬১ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যয় হয় খাদ্যপণ্য কিনতে। রিকশা ও ভ্যানওয়ালা শ্রেণির মানুষ খাদ্যপণ্য কিনেতে ব্যয় করে আয়ের ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ। ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এটি ৬১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
আর গ্রামে ভূমিহীন কৃষকরা তাদের মোট আয়ের ৬৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ খাদ্য কিনতে ব্যয় করে। দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এই হার ৬৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ। গ্রাম এলাকার রিকশা শ্রমিক বা স্বল্প আয়ের মানুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি কাছাকাছি রকমের।
এদিকে সানেমের তথ্য গ্রহণ করতে রাজি হননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানান, সানেম কীভাবে এই পরিসংখ্যান বের করেছে, সেটি তার জানা নেই। সরকারি সংস্থা বিবিএস যে পরিসংখ্যান দেয়, সেটিই সঠিক। এই পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও ব্যবহার করে।