নিউজ ডেষ্ক- আগামী মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ। রফতানির পরিমাণ ২১৫ কোটি বুশেল বা ৫ কোটি ১৫ লাখ টনে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন তারা।
২০২২-২৩ মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রফতানিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। এক বছরের ব্যবধানে রফতানি ১০ কোটি বুশেল বাড়বে বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে দেশটি। মূলত অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দেশটির কৃষকরা আবাদ বাড়াবেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
গ্রেইন অ্যান্ড অয়েল সিড আউটলুক শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২-২৩ মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন উৎপাদন ৪৫০ কোটি বুশেল বা ১২ কোটি ২৫ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বাড়বে ১ শতাংশ। দেশটির ৮ কোটি ৮০ লাখ একর জমিতে তেলবীজটির আবাদ করা হবে। ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদনের পেছনে বেশি জমিতে আবাদই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে।
প্রতিবেদনে আরো আরো বলা হয়, ২০২২-২৩ মৌসুমে একরপ্রতি উৎপাদন গত বছরের মতো প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। প্রতি একর জমিতে ৫১ দশমিক ৫ বুশেল উৎপাদন হতে পারে। গত বছর একরপ্রতি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৫১ দশমিক ৪ বুশেল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, খরা পরিস্থিতির কারণে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় সয়াবিন উৎপাদন দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চল থেকে আমদানিকারক দেশগুলো সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। বিকল্প হিসেবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঝুঁকছে।
গত ২০-২১ অর্থবছরে দেশটির কৃষকদের বড় একটি অংশ অর্গানিক খাদ্যশস্য আবাদ করেছে। পণ্যবাজারের তথ্য সেবাদাতা ও অর্গানিক এবং নন-জিএমও কৃষিপণ্যের অনলাইন বিপণন প্রতিষ্ঠান মার্কারিস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে অর্গানিক সয়াবিনের আবাদ ও অর্গানিক খাদ্যশস্যের আবাদ বৃদ্ধির তথ্য জানিয়েছে।
মার্কারিস জানায়, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সব মিলিয়ে ৯১ লাখ একর জমিতে অর্গানিক খাদ্যশস্য আবাদ হয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী আবাদে জ্বালানি জুগিয়েছে সয়াবিন। ৪০ হাজার একর জমিতে তেলবীজটির আবাদ করা হয়। এক বছরে সয়াবিন উৎপাদন বেড়েছে ১৩ শতাংশ। শুধু তাই নয়, মাথাপিছু আবাদ ও উৎপাদনও বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়।
মার্কারিসের অর্থনীতিবিদ হেনরি উইলসন বলেন, গত বছরজুড়ে অব্যাহতভাবে সয়াবিনের দাম বাড়তে থাকে। এ কারণে ব্যাপক অর্গানিক সয়াবিন আবাদ করা হয়। কৃষকদের প্রত্যাশা, তেলবীজটির বাজারে ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত থাকবে। চাঙ্গা বাজার থেকে বড় অংকের মুনাফার সুবিধা নিতেই তারা আবাদ বাড়ান।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্গানিক খাদ্যশস্য আবাদ হয়েছে মন্টানায়। এছাড়া ইলিনয়, লোওয়া, কানসাস ও নেবরাস্কায়ও আবাদ প্রসারিত হয়েছে।
উল্লেখ্য বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে সয়াবিন চাষ। এ বছর উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলায় দেড় হাজার বিঘা জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়েছে। আগামী বছরের ৫০ হাজার বিঘায় সয়াবিন চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।
পড়তে পারেন: বাংলাদেশে সয়াবিন চাষ পদ্ধতি -পর্ব ২
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সয়াবিনের উৎপাদন বাড়াতে পাড়লে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব। কারণ, সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী শিল্পের একমাত্র কাঁচামাল সয়াবিন। চাহিদার বেশির ভাগ সয়াবিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এত দিন নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল ও ফরিদপুর জেলায় সয়াবিনের চাষ হতো।
মাটি সয়াবিন চাষের উপযোগী হওয়ায় সয়াবিন চাষ শুরু হয়েছে নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের কৃষক আসাদুজ্জামান জানান, এপেক্স অর্গানিক সয়া ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগিতায় ৫০ শতক জমিতে তিনি সয়াবিন চাষ করেছেন।
এতে তাঁর খরচ হয়েছে ছয় হাজার টাকা। উৎপাদন হয়েছে ১৬ মণ সয়াবিন। যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৯ হাজার ২০০ টাকা। অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জমিতে ৯৬ দিনের ব্যবধানে খরচ বাদে তাঁর লাভ হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ টাকা। ভবিষ্যতে তিনি সয়াবিন চাষের জমির পরিমাণ বাড়াবেন।