নিউজ ডেষ্ক- পটুয়াখালীতে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে জেলা কার্যালয়স্থল। এতে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কিছু রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। বিএনপি ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে সরে গেছে।
বুধবার সকালে শহরের বনানী এলাকার জেলা কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— সদর থানার আহ্বায়ক কাজী মাহবুব, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি উজ্জ্বল, ছোট বিঘাই মোস্তফা আকন, থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পৌর যুবদলের মজনু, সদর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাকারিয়াসহ ৩০ জন।
পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র ঘোষিত সারা দেশে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে পটুয়াখালী পৌঁছান কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুন্নবী সোহেল।
সকালে শহরের বনানী এলাকার জেলা কার্যালয়ে সমবেত হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টার দিকে ছাত্রলীগের কর্মীরা জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে মোটরসাইকেল মহড়াসহকারে এসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় বিএনপি-ছাত্রলীগের কর্মীরা মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় দলীয় কার্যালয়েও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি উজ্জ্বল তালুকদার, উপজেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মাহবুব গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে সাংবাদিকদের তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুন্নবী সোহেলের অবস্থান এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুল মান্নান বলেন, বিগত দিন থেকেই পটুয়াখালী বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দ্বন্দ্ব চলে আসছে। আর এই দ্বন্দ্বে একাধিক হামলা ও সংঘাতের খবর সবাই অবগত আছেন। নিজেদের কোন্দল আমাদের ওপর চাপিয়ে সরকারকে বিব্রত করার অপচেষ্টা করছে বিএনপি। আজকের ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত নয়।
পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন বলেন, দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি রোধে কেন্দ্রীয় বিএনপির ডাকা কর্মসূচিতে পটুয়াখালীতে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিএনপির বনানী রোডস্থ কার্যালয় থেকে সরকারি কলেজের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
তিনি আরও পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা করে মিছিলটি নিয়ে বনানী চত্বরে পৌঁছলে উল্টো দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নামধারী সন্ত্রাসীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় আওয়ামী লীগের হামলায় বিএনপির অন্তত ৫০ নেতাকর্মী আহত হন। পুড়িয়ে দেওয়া হয় মোটরসাইকেল।
তিনি আরও বলেন, এ হামলায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সফিউল বাশার উজ্জল, সদর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাকারিয়া আহম্মেদ, মো. দেলোয়ার হোসেন, কাজী মাহাবুব আলম, মীর মাকসুদুর রহমান, মো. বশির উদ্দিন, মো. মোস্তফা, মো. নুরুজ্জামান, মো. মশিউর রহমান মিলনসহ একাধিক নেতাকর্মীরা পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সফিউল বাশার উজ্জল বলেন, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে সারা দেশের ন্যায় পটুয়াখালীতে বিএনপি কর্মসূচির ডাক দেন। বুধবারের ওই কর্মসূচিতে আওয়ামীর নামধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে আমার হাতে ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে তাদের সঙ্গে একাট্টা হয়ে আমাদের পেটায়। যাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।