নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে কিভাবে আঘাত করে ক্ষেপণাস্ত্র

আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এখন প্রায় নিত্যদিনের চিত্র। পারমাণবিক স্থাপনা ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর হামলার জবাবে ইরানও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে। উভয় পক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নির্ভুলভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। কিন্তু প্রযুক্তির কোন ম্যাজিকের মাধ্যমে এটা সম্ভব হচ্ছে?

আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মূল ভিত্তি—নির্ভুলতা। একসময় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রায় অনুমাননির্ভরভাবে পরিচালিত হতো। কিন্তু এখনকার স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যবস্তু নিজেই শনাক্ত করে হামলা চালাতে পারে। এর পেছনে রয়েছে উচ্চমানের প্রযুক্তির সমন্বয়—জিপিএস, ইনার্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম (INS) এবং উন্নত সেন্সর প্রযুক্তি।

উৎক্ষেপণের পর ক্ষেপণাস্ত্রটি জিপিএস স্যাটেলাইট থেকে সংকেত গ্রহণ করে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করে। এরপর সেটি পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুর অবস্থানের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়। যদি কোনো বিচ্যুতি দেখা দেয়, ক্ষেপণাস্ত্র নিজে থেকেই তা সংশোধন করে নেয়।

তবে কখনও যদি জিপিএস সংকেত ব্যর্থ হয় বা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করে দেওয়া হয়, তখন সক্রিয় হয় INS প্রযুক্তি। এটি ক্ষেপণাস্ত্রের গতি, দিক ও অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে পথ ঠিক রাখে। এই দুটি প্রযুক্তির সমন্বয়ই ক্ষেপণাস্ত্রকে নির্ভুল নিশানায় পৌঁছে দেয়।

লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি এলে ক্ষেপণাস্ত্র তার নিজস্ব সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করে টার্গেট শনাক্ত করে। এর মধ্যে রয়েছে—

* ইলেকট্রনিক জ্যামিং সিগন্যাল শনাক্তকরণ,

* স্যাটেলাইট মানচিত্রের সঙ্গে ভূমির প্রোফাইল মিলিয়ে দেখা,

* সংরক্ষিত ছবির সঙ্গে ক্যামেরার মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা ইত্যাদি।

বর্তমান সংঘাতে দেখা গেছে, উভয় দেশের ক্ষেপণাস্ত্র নির্ধারিত টার্গেটে সরাসরি আঘাত হানতে সক্ষম। বিশেষ করে ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সমগ্র ইসরায়েল জুড়ে আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে।

উৎক্ষেপণের পর এই ক্ষেপণাস্ত্র তিন ধাপে কাজ করে—

১. বুস্ট ফেজ (প্রাথমিক গতি অর্জন),

২. মিডকোর্স ফেজ (বায়ুমণ্ডলের বাইরে গমন),

৩. টার্মিনাল ফেজ (টার্গেটের দিকে শেষ ধাপে দ্রুত ধাবিত হওয়া)।

ইরান এসব ক্ষেপণাস্ত্র মোবাইল লঞ্চার, স্থলভিত্তিক ঘাঁটি এবং ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো থেকেও ছুঁড়তে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ভুয়া টার্গেট পাঠিয়ে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করার কৌশলও ব্যবহার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *