তেঁতুলতলা মাঠের জটিলতা আলোচনার মধ্য দিয়ে অবসান হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ

নিউজ ডেষ্ক- রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানার ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে সরব এলাকাবাসী ও সচেতন নাগরিকেরা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ের সমাধান করতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

এ জন্য আজ বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ পাঁচ সদস্যের একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিকেল তিনটার দিকে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,

থানা যেমন জরুরি বাচ্চাদের খেলার মাঠও জরুরি। আশা করি আলোচনার মধ্য দিয়ে জটিলতার অবসান হবে। মাঠে অবকাঠামো নির্মাণ আপাতত বন্ধ হবে কি-না এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে না। দেয়াল নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি নিয়ে তিনি ডিএমপির সঙ্গে কথা বলবেন।

তেঁতুলতলা কখনোই মাঠ ছিল না উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, এটি একটি খালি জায়গা ছিল। পুলিশ তা কিনে নিয়েছে। এখন এটি পুলিশের নিজস্ব সম্পত্তি। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এখন যেহেতু এটি নিয়ে স্থানীয়রা আন্দোলন করছেন, তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি।

মন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আজ আমাকে একটি আবেদন দিয়ে গেছেন। তাদের সে আবেদন বিবেচনায় নিয়ে আমি বিকল্প জমি খোঁজার জন্য বলেছি। আমরা সবাই মিলে একটি বিকল্প জায়গা খুঁজে পেলে হয়তো সমস্যার সমাধান হবে। এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বেলার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন। তিনি নিজেও বাচ্চাদের খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাকে বলেছি- থানাভবন করতে হলে বিকল্প কোনো জমিতে করা যাবে। আমরা একটি জায়গা তাকে দেখিয়েও দিয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জায়গাটি যেহেতু পুলিশ কিনে নিয়েছে। ফলে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি কথা বলবেন।

তিনি বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি- প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দেবো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- সেই চিঠি তিনি পৌঁছে দেবেন। আগামীকাল আমরা চিঠিটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে দেবো। এই মুহূর্তে দেওয়াল নির্মাণ বন্ধ রাখার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি। তিনি বলেছেন, আজই বিষয়ে ডিএমপিকে তিনি জানাবেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, মন্ত্রী বলেছেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরই বিকল্প একটি জায়গা খোঁজা হবে। আমরা আশা নিয়েই ফিরছে। তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে আজ একদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেছেন, অন্যদিকে পুলিশি প্রহরায় মাঠে পুরোদমে থানা ভবনের দেয়াল নির্মাণ হতে দেখা গেছে। এমন প্রেক্ষিতে বেলা পৌনে তিনটার দিকে তেঁতুলতলা মাঠে বৃক্ষরোপণ করেছেন স্থানীয় প্রতিবাদী বাসিন্দারা। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীসহ বেশকয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছে। আমরা মাঠে গাছ লাগিয়ে দিলাম। বৈঠক শেষ হওয়ার পর মাঠে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হবে। তারপর দেয়াল লিখন করা হবে।

মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে অবস্থান করেন। বৈঠক থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশাবাদী ছিলেন রাশেদা কে চৌধুরী। বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের যে দিকটা খোলা আছে সেদিকে পাঁচ ইঞ্চি গাঁথুনির চার ফুট উচ্চতার দেয়াল উঠে গেছে। একজন শ্রমিক বলেন, চার ফুট দেয়ালের উপর এক ফুটের মতো ১০ ইঞ্চির ঢালাই হবে। সেই ঢালাইয়ের ওপর দেওয়া হতে পারে কাঁটাতার বা কাঁচ। যাতে দেয়াল ডিঙিয়ে মাঠে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। মাঠের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় পোশাক পরিহিত ২০ জনের মতো পুলিশ সদস্য দেখা গেছে। সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য মাঠের মধ্যে এবং আশপাশে রয়েছেন। মাঠের পাশে পুলিশের ২টি ভ্যান দেখা গেছে। উল্লেখ্য, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার দাবিতে অনেক দিন ধরে আন্দোলন চলছে। এরইমধ্যে গত রোববার আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না মাঠে নির্মাণ কাজের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করলে তাকে ও তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের কলাবাগান থানায় ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে প্রতিবাদের মুখে মধ্যরাতে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার দাবি জানিয়ে দুটি আলাদা বিবৃতি দেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। এ বিষয়ে সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠের জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজতে সবাইকে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও থানা ভবন করাটা অতীব জরুরি। কারণ, থানা এখন ভাড়া ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে, কী করা যায়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *