কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় শুরু থেকেই পাকিস্তানকে দোষারোপ করে আসছে ভারত। যদিও ইসলামাবাদ সেসব অভিযোগ নাকচ করে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে আসছে। প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতের একের পর এক কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
দুই দেশের সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই চলছে গোলাগুলি, পাল্টাপাল্টি হামলা। এমনকি, দুই দেশই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে শক্তির মহড়া দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধের আশঙ্কা দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে।
এই উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে ৫৭টি মুসলিম দেশের সংস্থা ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন)। তারা ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে ওআইসি জানায়, ভারতের ভিত্তিহীন অভিযোগ দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলছে। সংস্থাটি স্পষ্ট করে জানায়, তারা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে, কিন্তু একইসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের অধিকার আদায়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব কার্যকর করার দাবি জানায়।
ওআইসি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতি দ্রুত ও কার্যকর হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে করে উপমহাদেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়ানো যায়।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত একাধিক পদক্ষেপ নেয়। আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়, পাকিস্তানিদের দেশে ফিরে যেতে বলা হয়, সমস্ত ভিসা বাতিল করা হয়, এমনকি স্থগিত করা হয় সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তিও।
পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইসলামাবাদ ঘোষণা করেছে, তারা সিমলা চুক্তি স্থগিত করছে, ভারতের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য বন্ধ করছে এবং নিজেদের আকাশসীমা ভারতের জন্য নিষিদ্ধ করছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, ভারতের পানি চুক্তি স্থগিত করাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ সামিল মনে করছে পাকিস্তান। তিনি বলেন, দেশের পানির অধিকার রক্ষায় পাকিস্তান যেকোনো মূল্যে লড়াই করবে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ হুঁশিয়ার করে বলেন, “যদি উত্তেজনা বাড়ে, আমাদের থামানো সম্ভব হবে না। মোদি যদি আগ্রাসনের পথ বেছে নেন, তাহলে আমরা তার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যাব।”
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, পেহেলগামের হামলায় ভারতের প্রতিটি নাগরিক রক্তক্ষরণ অনুভব করছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সীমান্তে যেকোনো হুমকির জবাব দিতে তিন বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
তবে বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত এখনও হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ তুলে ধরতে পারেনি। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে দিল্লির অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তবুও দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ যদি শুরু হয়, তা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠতে পারে।